দলকে শক্তিশালী করে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে: শেখ হাসিনা

851

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, মানুষ যাতে স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়ে আমাদেরকে নির্বাচিত করে এবং আমরা যেন দেশসেবা করে যেতে পারি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে কাউন্সিলরবৃন্দ আছেন- সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আর জাতির পিতার যে আদর্শ সেই আদর্শ মেনেই চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে নির্মিত প্যান্ডেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই অধিবেশন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৯টি বছর এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদের বিরুদ্ধে যত সংগ্রাম ও আন্দেলন এং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যত সংগ্রাম আওয়ামী লীগই সে সংগ্রাম করেছে এবং আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, বাঙালির জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করা, একে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়েই জাতির পিতা তাঁর সারাটি জীবন উৎসর্গ করে যান। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য তিনি আজীবন জেল, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে গেছেন।
জাতির পিতার অবদান ও আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনভাবে সংগঠনটি গড়ে তোলেন, এর মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেন।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলার জনগণকে জাতির পিতার স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনকালে জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে পারেন নাই। সেই স্বপ্ন পূরণই তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাবা-মা’য়ের আত্মা যেন শান্তি পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে বিগত ১০ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। লক্ষ্য আরো অনেক দূর যেতে হবে। সেজন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ায় নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেখা যায় যে, অনেকেই ক্ষমতায় আসার পরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু আমরা সেটা পেরেছি। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছি। সেক্ষেত্রে আমি বলবো বলবো সকলকে সেই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন এবং জাতির যেকোন ক্রান্তি লগ্নে এর নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে। প্রতিটি কাউন্সিলরকে এটা মাথায় রাখতে হবে- জাতির পিতার সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পরে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন আর এরপরেই জাতির জীবনে ১৫ আগষ্ট বিপর্যয় নিয়ে আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে যে হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এদেশে শুরু হয়েছিল। যেখানে গণতন্ত্র ছিল না, কারফিউ গণতন্ত্র ছিল। যেখানে সেনাতন্ত্র ছিল, সামরিক স্বৈর শাসকরা রাষ্ট্র শাসন করেছে দীর্ঘ ২১ বছর, এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণ যে সরকারের সেবা পেতে পারে, জনগণের কল্যাণ করতে পারে, তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, এটা কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই জনগণ উপলদ্ধি করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসারা সবসময় নিজেদের ভাগ্য নিয়ে এবং অসৎ উপায়ে ক্ষমতা দখলকে বৈধ করার কাজেই ব্যস্ত ছিল। তারা জনগণের কথা চিন্তা করে নাই।
সরকার প্রধান বলেন, এদেশে ঋণ খেলাপি কালচার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে ব্যবহার করাসহ পুরো সমাজটাকে তারা ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সরকারের কোন নীতি আদর্শ থাকে না, কোন লক্ষ্য থাকে না, সে সরকার চলে কি করে, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি এ সময় জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের গোপন প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত ১৪ খন্ড ভলিউমের বইগুলো দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে পড়ার পরামর্শ দেন।
কারো বিরুদ্ধে প্রকাশিত গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে অদ্যাবধি কেউ কোন পুস্তক রচনা না করলেও জাতির পিতা কিভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কি কি ষড়যন্ত্র হয়েছিল, কি কি অপপ্রচার হয়েছিল-সেগুলো তুলে ধরার জন্যই ’সিক্রেট ডকুমেন্ট অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক এ সংক্রান্ত বইগুলো তিনি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বইগুলো থেকে আপনাদের অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে।’
শৈত্য প্রবাহের কারণে প্রচন্ড শীত অনুভূত হওয়ায় কাউন্সিলের কর্মসূচি সংক্ষেপ করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।