বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বাংলাদেশে কোনো ধর্মীয় নৃশংসতার ঘটনা ঘটেনি : অমিত শাহ

660

॥ আমিনুল ইসলাম মির্জা ॥
নয়াদিল্লি, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু বাঙালি যে কোনো ধরনের নৃশংসতা ও নিপীড়ন থেকে নিরাপদ থাকায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি আজ এই হাউজ ফ্লোর (লোক সভা)-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার ধন্যবাদের রেকর্ড রেখে বলতে চাই যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘিষ্ঠের প্রতি একটিও নৃশংসতার ঘটনা ঘটেনি।’
শাহ বিতর্কিত ‘সিটিজেন অ্যামেন্টমেন্ট বিল-২০১৯’ নিয়ে সুদীর্ঘ ৯ঘন্টা প্রচন্ড বিতর্ক চলাকালে বিরোধীদের সমালোচনার প্রতিত্তোর দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন। পরে বিরোধী দল ও অন্যান্য দলগুলোর প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে আইনটি লোক সভায় পাস করা হয়।
তিনি তার বক্তব্যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় তাদের নিরাপত্তা প্রদানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বেশ কিছু নৃশংসতার তালিকা তুলে ধরেন।
তিনি ভারত-বাংলাদেশ শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তির উল্লেখ করে বলেন, ঢাকায় ১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ চুক্তির আওতায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত ছিল।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এ চুক্তির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যের রেক্ষণাবেক্ষণ হয়েছিল।
তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধী দেশ ভাগের সময় এক নিকৃষ্টতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরবর্তী অবস্থা দেখতে নোয়াখালী সফর করেন। কিন্তু ২০০১ সালের ২ অক্টোবর তার জন্মদিনে চরফ্যাশন উপজেলায় ৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১০০ হিন্দু ধর্ষিত হয় এবং ১৯৯০ সালের অক্টোবরে ভোলায় ২০০ সংখ্যালঘু নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। কাইভেইল্যাধামে হিন্দুদের ৩০০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং লালমোহন উপজেলায় ১০০০ হিন্দু পরিবার হামলার শিকার হয়। বহু মন্দির ধ্বংসেরও উল্লেখ করেন শাহ।
তিনি প্রশ্ন করেন ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শতকরা ২২ শতাংশ থেকে ২০১১ সালে কিভাবে শকরা ৭ ভাগে নেমে আসে?
তবে, তিনি এ বিষয়টি পরিষ্কার করেন যে, ভারত কখনোই রোহিঙ্গা শরনার্থিদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিবে না এবং তিনি এ পরামর্শে সম্মতি প্রদান করেন যে, ‘ভারতে কোনো প্রকার শরণার্থী নীতিমালার প্রয়োজন নেই, শরণার্থীদের নিরাপত্তার জন্যে সেখানে যথেষ্ট আইন বলবৎ রয়েছে।’ পরে লোক সভায় বিলটি পাশ হয়। বিরোধী দল আইনটি নিয়ে আইনের খসরায় সংবিধান অমান্যের অভিযোগ তোলে।
আজ বেলা ১২টা ৪ মিনিটে আইনের পক্ষে ৩১১ ভোট ও বিপক্ষে ৮০ ভোট পড়ে। আগামীকাল স্বীকৃতির লক্ষ্যে বিলটি রাজ্য সভায় পেশ করা হবে।
দি সিটিজেনশিপ ( এমেন্ডমেন্ট) বিল (সিএবি) ২০১৯-এ ১৯৫৫ সালের সিটিজেন শীপ অ্যাক্ট-অনুসারে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর অথবা তার আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খৃষ্টান, পারসিস ও জৈন সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত আইনের সংস্কার চাওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুটারে আইনটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এ আইনটি ভারতের কয়েক শত বছরের পুরনো আত্মীকরণ নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।’ লোক সভায় আইনটি পাশের কয়েক মিনিট পর তিনি টুইট করেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই বিল সংক্রান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলীয় আইন প্রণেতাগণ সরকারের প্রতি সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন এবং তারা বলেন, কেন্দ্র এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মের আনুকূল্যে দেশে বিরাজমান ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনা নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’ ‘কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শশী থারোর বলেন, ‘এই বিল সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য লঙ্ঘন করে এবং আর্টিকেল ১৪ লঙ্ঘন করে, যেখানে আইনের ঊর্ধ্বে সাম্যের নিশ্চয়তা প্রদান করে।’
ভারতের বিরোধী দলের অভিযোগ, বিলটি মুসলমানদের বিরূদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং নাগরিকত্বের সঙ্গে বিশ্বাসকে যুক্ত করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ আইন অতীতে ভারতের জনসাধারণের যে অধিকার দেয় তা ছাড়া আর কিছু নয়। এই বিল ভারতের মুসলমান নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিছু করে না।
গত রাতে বিতর্কে অংশ গ্রহণকারী হায়দারাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ঐশি বলেন, ‘এটি জাতিকে বিভক্ত করার এক প্রচেষ্টা… প্রস্তাবিত আইনটি দেশের সংবিধানের পরিপন্থি।’
তিনি সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ‘হিটলারের আইনের চেয়েও খারাপ’ বলে দাবি করেন’ এবং উত্তপ্ত লোক সভার বিতর্কের মাঝে আইনের একটি কপি ছিঁড়ে ফেলেন।
ভারতের উত্তর পূর্ব প্রদেশসমূহের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আগরতলা এবং আসামের বিভিন্ন সংগঠন এই আইনের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আন্দোলনকারীরা দেশের সংবিধানের মূলনীতি ধর্মনীরপেক্ষতার রক্ষায় এ আইন বাতিলের দাবি জানায়।
এদিকে, প্রভাবশালী উত্তর পূর্বঞ্চলের ছাত্র সংগঠন ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির পরিপন্থি দাবি করে এই আইনের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার ১১ ঘন্টার ধর্মঘট ঘোষণা করেছে।
আসামে, প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো এই আইনের পূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর হুমকী দিয়েছে।