এসডিজি অর্জনে আরো বিনিয়োগ করতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

787

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের বিনিয়োগ এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আর্থিক ঘাটতি পূরণে দেশের জন্য সহায়ক হবে।
আজ এখানে একটি হোটেলে আয়োজিত এশিয়া প্যাসিফিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এজেন্ডা-২০৩০ বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ
অর্জনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সংগ্রহ করা।’
আইসিসি’র শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে ইউএন এসকাপ, আইসিসি, এডিবি এবং এফডিআই’র সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) ‘ফিন্যান্সিং ইনক্লুসিভ এন্ড সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
রাষ্ট্রপতি আরো বেশী সক্রিয় হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বেসরকারি খাতের বাড়তি অংশগ্রহণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা কাক্সিক্ষত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার খুবই উদার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি চালু করে বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) সংরক্ষনে বিভিন্ন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগকে (এফডিআই) স্বাগত জানাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতি সম্প্রদায়ে একটি সক্রিয় অংশীদার হতে চায়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক উন্মুক্ত অর্থনীতির দেশসমূহের অন্যতম এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। এখানে কোন ধরনের বাণিজ্য বাধা নেই, ট্যারিফ হার যুক্তিসঙ্গত। আমরা সরাসরি এবং পোর্টফোলিও উভয় ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে খুবই আকর্ষনীয় ও প্রতিযোগিতামূলক ইনসেন্টিভ প্যাকেজ দিচ্ছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এফডিআই ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সালে ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্প নীতি সে অনুযায়ী সমন্বয় করা হয়েছে। অধিক ও টেকসই বিদেশী এবং অভ্যন্তরিন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি এই অঞ্চলে বাংলাদেশকে অতি দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ অনেক বাধা বিপত্তি এড়িয়ে বিগত কয়েক বছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অজর্নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে এবং জাতিসংঘ মানব উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।
আবদুল হামিদ বলেন, পাশাপাশি বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ইনক্লুসিভ উন্নয়ন সূচকে ৩৬ তম অবস্থানে এবং গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ৪৮ তম অবস্থানে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সরকার দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বক্তব্যের শুরুতেই দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এসকাপের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আরমিদা সালসিয়া আলিসজাহবানা, আইসিসিবি’র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ড. আন্তোনিও গুতেরেজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে একটি বার্তা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সফররত মন্ত্রিবর্গ, বিদেশী প্রতিনিধিগন, ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।