জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

674

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ রোল মডেল।
জঙ্গি দমনে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ বিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই কাজটি আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষতার সাথে করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কুড়িল বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপী উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯-এর সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ), ইউএসএইড ও জাতিসংঘের (ইউএন) যৌথ উদ্যোগে দুই দিন ব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নিজের সন্তানদের দিকে সর্বদা খেয়াল রাখার আহবান জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সন্তানদের সবসময় ভালো কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে, যাতে তারা উগ্রবাদে জড়িয়ে না পড়ে।
তিনি বলেন, অতীতে টার্গেট করে দেশের নানা প্রান্তে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বাছাই করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ হত্যা করা হয়।
ইসলামে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা কখনো জঙ্গিবাদ পছন্দ করেনা। শান্তি প্রিয় এই দেশে জঙ্গি, সন্ত্রাস আসবে এটা কোনো ভাবেই বিশ্বাস করা যায়না। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে, কিন্তু জঙ্গি-সন্ত্রাসের কাহিনী ছিলনা।
এ দেশের জনগণ জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করেই টার্গেট কিলিং শুরু হলো। প্রথমে ইতালির নাগরিক, তারপর জাপানি নাগরিককে টার্গেট করা হলো।
কোনো মাদরাসা জঙ্গি তৈরি করে না উল্লেখ করে আছাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কেননা ইসলামে এটার কোনো স্থান নেই। তাছাড়া বিশ্বের কোনো ধর্মেই মানুষ হত্যাকে বিশ্বাস করে না। সমাজকে বুঝতে হবে কেন তাদের সন্তান জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারন খুঁজে বের করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের ছেলে মেয়ে যেন নিঃসঙ্গতা, বিষন্নতা ও একাকীত্বে না ভোগে। তাদের বিভিন্নভাবে কাজে যুক্ত করতে হবে। তাহলে তাদেরকে আমরা জঙ্গিবাদের মতো মতবাদ বা চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে রাখতে পারবো।
তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করবো ইন্টারনেটে কোনো কিছু দেখে সহজে বিশ্বাস না করতে। শুধুমাত্র নিশ্চিত হলেই সেটা বিশ্বাস করা উচিত। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির অবাধ ও সহজলভ্য ব্যবহারের ফলে পথভ্রষ্ট, নীতিভ্রষ্ট ও বিকৃতমনা আদর্শ তথা ভয়ঙ্কর বিপদজনক উগ্রবাদ ও দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করেছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। সেজন্য আজ উগ্রবাদ পরিবার সমাজ রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক গন্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক রূপ লাভ করেছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আর যদি একটি হলি আর্টিজান হতো, আমাদের সকল উন্নয়ন কাজ থমকে যেত। কেননা যারা জঙ্গিবাদ চায়। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না।
তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এটাকে বৈশ্বিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে।
সভাপতির বক্তৃতায় মাঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি দমনে বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করে এখন থেকে একযোগে কাজ করলে অধিকতর ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করেন।
সোমবার দুই দিন ব্যাপী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯ এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। সম্মেলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ,ধর্মীয় প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিদেশী কূটনৈতিকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।