কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

406

ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কবি বেগম সুফিয়া কামালের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আজিমপুর কবরস্থানে সুফিয়া কামালের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ইত্যাদি।
সকালে আজিমপুর কবরস্থানে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি. কন্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা নেতৃত্বে সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
পরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে গুলশান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সারাহ বেগম কবরী।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা পরিষদ বিকালে সুফিয়া কামাল ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। ১৯৭০ সালে সুফিয়া কামাল এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে কবির প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এডভোকেট সুলতানা কামাল ও পরিষদের সদস্যরা। পরে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাস পুরাকায়স্থ, তনুশ্রী মল্লিক, কানিজ ফাতেমা টগর প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উম্মে সালমা।
মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙ্গালীর সমস্ত প্রগতীশীল আন্দেলনে ভূমিকা পালনকারী সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে বার্ধক্যজনিত কারনে ইন্তেকাল করেন। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যদায় ২৮ নভেম্বর তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয় ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কোলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এ বছর তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন।
১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।
সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তাঁর উলে¬খযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তাঁর অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।
সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে উলে¬¬খযোগ্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক।