ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হার দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু করলো বাংলাদেশ

364

ইন্দোর, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হার দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ শুরু করলো বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ইন্দোর টেস্টে তিন দিনেই হেরে গেলো টাইগাররা। সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেল মোমিনুল হকের দল। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ২৪৩ রানের সুবাদে দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করেছিলো ভারত। তবে গতকাল রাতে ঐ স্কোরেই নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে টিম ইন্ডিয়া। ফলে ৩৪৩ রানে পিছিয়ে তেকে তৃতীয় দিনের শুরুতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে আবারো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬ রানের মধ্যে দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস ফিরে যান। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ইমরুলকে বোল্ড করেন ভারতের পেসার উমেশ যাদব। আর সপ্তম ওভারের শেষ বলে সাদমানের উইকেট উপড়ে ফেলেন ভারতের আরেক পেসার ইশান্ত শর্মা। মজার ব্যাপার হলো, প্রথম ইনিংসের মত এবারও একই বোলারদের কাছে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাদমান-ইমরুল। আরও মজার ব্যাপার দু’জনই ৬ রান করে করেন। প্রথম ইনিংসেও ৬ রান করে করেছিলেন তারা।
দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজেন তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক মোমিনুল হক ও চার নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। বাউন্ডারি মেরে ভারতের বোলারদের লাইন-লেন্থহীন করার চেষ্টা করেন তারা। মিঠুনের ৩টি বাউন্ডারি তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। কিন্তু বল হাতে নিয়েই উইকেট তুলে নেন ভারতের তৃতীয় পেসার মোহাম্মদ সামি। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই মোমিনুলকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সামি। কিন্তু মোমিনুলকে আউট দেননি অন-ফিল্ড আম্পায়ার। তাতেই রিভিউ নেন ভারতের অধিনায়ক। রিভিউতে সমাপ্তি ঘটে ৭ রান করা মোমিনুনের ইনিংসের।
অধিনায়কের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মিঠুন। সামির দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৪টি চারে ১৮ রান করেন মিঠুন। ফলে ৪৪ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন মিডল-অর্ডারের দুই ভরসা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম সেশনে আর কোন উইকেট পড়তে দেননি তারা। তাই ৪ উইকেটে ৬০ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
তবে বিরতির পর বাংলাদেশ শিবিরে আবারো আঘাত হানেন সামি। মাহমুদুল্লাহকে ইন-সুইংয়ে পরাস্ত করেন তিনি। দ্বিতীয় স্লিপে মাহমুদুল্লাহ’র ক্যাচ নেন রোহিত শর্মা। ২টি চারে ১৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
দলীয় ৭২ রানে মাহমুুদুল্লাহ আউট হন। ফলে ইনিংস হারের আরো কাছে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ভারতের বোলারদের সামনে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুশফিক ও উইকেটরক্ষক লিটন দাস। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার চেষ্টা করে দলের স্কোর শতরান অতিক্রম করান মুশফিক-লিটন। মুশফিক ব্যাট হাতে সর্তক থাকলেও বাউন্ডারিতে মনোযোগি ছিলেন লিটন। ৬টি চারে উইকেটে সেট হয়ে যান লিটন। তাতে জমেও উঠেছিলো মুশফিক-লিটন জুটি। কিন্তু ৪০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জমে যাওয়া এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন। উইকেট ছেড়ে শট খেলে অশ্বিনকেই ক্যাচ দেন লিটন। ৬টি চারে ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন লিটন। এই জুটি ৬৩ রান উপহার দেন দলকে।
লিটনের বিদায়ে আবারো দ্রুত ইনিংস হারের দিকে ঝুঁকে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু এবারও বড় জুটি পায় বাংলাদেশ। ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই জুটিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। মুশির হাফ-সেঞ্চুরির পরই চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তাই মুশফিক-মিরাজের ব্যাটিং নৈপুন্যে ঘুড়ে দাড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ।
কিন্তু চা-বিরতির পর ভারতকে দারুন এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন উমেশ। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ রান করা মিরাজকে বোল্ড করেন উমেশ। ফলে দলীয় ১৯৪ রানে বাংলাদেশের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে। এতে বাংলাদেশের ইনিংস হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
দলীয় ২০৮ রানে বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মুশফিককে বিদায় দিয়ে ভারতকে জয়ের কিনারায় পৌঁছে দেন অশ্বিন। অশ্বিনকে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড-অফে ক্যাচ দেন মুশি। সেখানে দারুন এক ক্যাচ নেন পুজারা ৭টি চারে ১৫০ বলে ৬৪ রান করেন মুশফিক। এরপর ২১৩ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান এবাদত হোসেনকে শিকার করে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন অশ্বিন। ভারতের পক্ষে সামি ৪টি, অশ্বিন ৩টি, উমেশ ২টি ও ইশান্ত ১টি উইকেট নেন।
আগামী ২২ নভেম্বর থেকে কলকাতায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ-ভারত। টেস্টটি হবে দিবা-রাত্রির। টেস্ট ইতিহাসে দু’দলের এটি প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট।
স্কোর কার্ড (টস- বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৫০/১০, ৫৮.৩ ওভার (মুশফিক ৪৩, মোমিনুল ৩৭, লিটন ২১, মিঠুন ১৩, মাহমুদুল্লাহ ১০, আবু জায়েদ ৭, সাদমান ৬, ইমরুল ৬, এবাদত ২, তাইজুল ১, মিরাজ ০, সামি ৩/২৭, ইশান্ত ২/২০, অশ্বিন ২/৪৩, উমেশ ২/৪৭)।
ভারত ইনিংস :
মায়াঙ্ক আগারওয়াল ক আবু জায়েদ ব মিরাজ ২৪৩
রোহিত শর্মা ক লিটন ব আবু জায়েদ ৬
চেতেশ্বর পূজারা ক অতি (সাইফ) ব আবু জাায়েদ ৫৪
বিরাট কোহলি এলবিডব্লু ব আবু জায়েদ ০
আজিঙ্কা রাহানে ক তাইজুল ব আবু জায়েদ ৮৬
রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত ৬০
ঋদ্ধিমান সাহা বোল্ড ব এবাদত ১২
উমেশ যাদব অপরাজিত ২৫
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-৩, ও-৩) ৭
মোট (৬ উইকেট ডিক্লেয়ার, ১১৪ ওভার) ৪৯৩
উইকেট পতন : ১/১৪ (রোহিত), ২/১০৫ (পূজারা), ৩/১১৯ (কোহলি), ৪/৩০৯ (রাহানে), ৫/৪৩২ (আগারওয়াল), ৬/৪৫৪ (সাহা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
এবাদত : ৩১-৫-১১৫-১ (ও-৩),
আবু জায়েদ : ২৫-৩-১০৮-৪ (নো-৩),
তাইজুল : ২৮-৪-১২০-০,
মিরাজ : ২৭-০-১২৪-১,
মাহমুদুল্লাহ : ৩-০-২৪-০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
সাদমান ইসলাম বোল্ড ব ইশান্ত ৬
ইমরুল কায়েস বোল্ড ব উমেশ ৬
মোমিনুল হক এলবিডব্লু ব অশ্বিন ৭
মোহাম্মদ মিঠুন ক আগারওয়াল ব সামি ১৮
মুশফিকুর রহিম ক পূজারা ব অশ্বিন ৬৪
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক রোহিত ব সামি ১৫
লিটন দাস ক এন্ড ব অশ্বিন ৩৫
মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ব উমেশ ৩৮
তাইজুল ইসলাম ক সাহা ব সামি ৬
আবু জায়েদ অপরাজিত ৪
এবাদত হোসেন ক উমেশ ব অশ্বিন ১
অতিরিক্ত (বা-২, লে বা-৯, নো-১, ও-১) ১৩
মোট (অলআউট, ৬৯.২ ওভার) ২১৩
উইকেট পতন : ১/১০ (ইমরুল), ২/১৬ (সাদমান), ৩/৩৭ (মোমিনুল), ৪/৪৪ (মিঠুন), ৫/৭২ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৩৫ (লিটন), ৭/১৯৪ (মিরাজ), ৮/২০৮ (তাইজুল), ৯/২০৮ (মুশফিক), ১০/২১৩ (এবাদত)।
ভারত বোলিং :
ইশান্ত : ১১-৩-৩১-১,
উমেশ : ১৪-১-৫১-২ (ও-১),
সামি : ১৬-৭-৩১-৪ (নো-১),
জাদেজা : ১৪-২-৪৭-০,
অশ্বিন : ১৪.২-৬-৪২-৩।
ফল : ভারত ইনিংস ও ১৩০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মায়াঙ্ক আগারওয়াল (ভারত)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।