বাসস প্রধানমন্ত্রী-৭ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ‘আইওয়াশ’ নয় : প্রধানমন্ত্রী

459

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৭ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রশ্নোত্তর
দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ‘আইওয়াশ’ নয় : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, ক্রিকেট খেলোয়াড়দের ধর্মঘট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের যদি কোন দাবি-দাওয়া থাকতো তারা কিন্তু বিষয়টি পূর্বেই জানাতে পারতো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মঘট করতে গেলে পূর্বে একটি দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা হয় বা একটা সময় দেয়, নোটিশ দেয়, তারপরে করে। সেটা তারা করেনি।’
পরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের আলোচনায় বিষয়টির মিটমাট হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ক্যাসিনোর সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডকে জড়িত করার কোন কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হয়তো এখানকার কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিল। সেরকম সাংবাদিক মহলে খোঁজ করলেও পাওয়া যেতে পারে জানান তিনি।
তিনি এ প্রসঙ্গে কখন কিসে কে কোথায় ধরা পড়ে তার ঠিক নেই উল্লেখ করে সে ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে কি করবেন বলে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান এবং বলেন, ‘যার কথা আপনারা বলছেন তাকে ধরা হয়েছে।’
এ সময় দেশে এ ধরনের ক্যাসিনো চলতে থাকলেও সংবাদপত্রে রিপোর্ট না আসার বিষয়ে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
আইসিসির শাস্তির মুখে পড়তে যাওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিষয়ে সরকারের খুব বেশিকিছু করণীয় আছে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিসিবি সব সময় সাকিবের সঙ্গে আছে। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’ তিনি বলেন, ‘ওর (সাকিব) যেটা উচিত ছিল, ওর সঙ্গে যখন যোগাযোগ করেছিল বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। আসলে ও একটা ভুল করেছে। আইসিসি যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় আমাদের আসলে কিছু করার থাকে না। খুব বেশিকিছু যে করণীয় আছে সেটা কিন্তু নয়।’
এ সময় বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ম্যাচ দেখতে ভারতে যাওয়া সম্পর্কিত একটি সংবাদের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী এটাকে কূটনেতিক কোন বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সৌরভ গাঙ্গুলি একজন বাঙালি ছেলে। ও আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমি রাজি হয়ে গেলাম। একজন বাঙালি দাওয়াত দিয়েছে। আমি বলেছি আসবো। ও যে এখন বোর্ডে আছে তা নয়। ক্রিকেটার হিসাবেও আমার পছন্দের।’
প্রধানমন্ত্রী পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে এটাকে সাময়িক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমি খবর পেলাম প্রায় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে। তাছাড়া ১০ হাজার টন কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে। কেউ যদি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য পেঁয়াজ মজুদ করে থাকেন তাহলে এটা পচনশীল পণ্য হওয়ায় তারা নিজেরাও বিপাকে পড়ে যেতে পারেন বলেও সতর্ক করে দেন তিনি ।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না, কারণ তিনি নিজেও ওই ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তবে, এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করায় এখন আর কোনো বক্তব্য থাকতে পারে না।
গত নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি ভোট না দিত, আমাদের পক্ষে না থাকতো, তাহলে আমাদের সমর্থন থাকতো না। তাদের (বিএনপি) ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিলাম। আমাদের জনসমর্থন ছিল।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে জনগণ, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগের না, বিএনপির ব্যবসায়ীরাও আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। কারণ আমরা সবাইকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। আমরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। ন্যাম সম্মেলনে যাওয়ার পর সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানকার প্রবাসীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা বলেছেন তারা ভালো আছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা খুশি। তাই কারো কথায় কিছু যায়-আসে না।’
ধনী-গরিবের বৈষম্য হ্রাস সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা দেখা যায় যে দেশ যখন উন্নত হতে থাকে তখন কিছু লোকের কাছে বেশি অর্থ চলে আসে।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নুসরাত হত্যায় দ্রুততম সময়ে বিচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংবাদ পত্র, ইলেকট্রসিনক মিডিয়া সহ সকল গণমাধ্যমের ভ’মিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার মূলে ছিল নুসরাত নিজেই নিজের জবানবন্দী দিয়ে যেতে পেরেছিল। কারণ যে কোন হত্যা মামলার ক্ষেত্রে চাক্ষুস সাক্ষী থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে নুসরাতের নিজের জবানবন্দীটা ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স। কারণ অনেক সময় আমাদের মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বাক্ষীর অভাব থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নুসরাতের বিষয়ে তার এলাকায় জনমতও সৃষ্টি হয়েছিল এবং আমি সাংবাদিকদেরও সাধুবাদ জানাই আপনারা একটা বিরাট ভূমিকা পালন করেছেন। যে কারণে দ্রুত বিচার করা সম্ভব হয়েছে এবং এটা একটা দৃষ্টান্ত। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে অন্যান্য মামলাগুলোর যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সে ব্যবস্থা আমরা নেব।
তিনি নুসরাত সম্পর্কে বলেন, ‘সে অত্যন্ত সাহসী মেয়ে। সে জীবন দিয়ে গেছে কিন্তু সাহসী একটা ভূমিকা রেখে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত সে কিছুতেই নত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ লাগে একটি মেয়ে যে অন্তস্বত্তা সে কি করে খুনের মত একটি নৃশংস ঘটনায় জড়াতে,সহযোগিতা করতে পারে, গায়ে পেট্রল ঢালতে পারে। মানুষের মনুষ্যত্ব বোধ বলে কি কিছু নাই? এগুলোরতো শাস্তি হওয়া দরকার।’
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
বাসস/এএসজি-এফএন/২২৪০/-এবিএইচ