বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে : বিশ্বব্যাংক

626

ঢাকা, ১০ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামীতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০১৯ অর্থবছরে শিল্প, ক্রমবর্ধমান রপ্তানি, অভ্যন্তরীণ ব্যয় ও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক মিশন কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন আপডেট অক্টোবর ২০১৯: উচ্চশিক্ষা ও চাকরির দক্ষতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ঋণ প্রদানকারী সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং সরকারি পূর্বাভাস জাতীয় বাজেটের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস দিয়েছে।
অন্য আরেকটি ঋণপ্রদানকারী সংস্থা এডিবি’র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৮ শতাংশ হবে।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ’১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পরিচালক মার্সি মিয়াং টেমবন, সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হেভেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরও দক্ষ ও মানসম্পন্ন উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে নিতে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তির যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অনেক প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে সংখ্যা কোনো বিষয় নয়। ইতিবাচক উন্নতি যে হচ্ছে এটিই অনেক বড় ব্যাপার। তাছাড়া দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। গ্রামীণ অর্থনীতি ভাল করছে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রফতানি বহুমুখীকরণ, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ডুয়িং বিজনেস পরিবেশ উন্নত করতে হবে। কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই জরুরি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই।
হেভেন তার পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় বাংলাদেশ শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এছাড়া জনগণের বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
এই অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধিসহ চলতি হিসেবে ঘাটতি বাড়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের ওপর জোর দিয়ে হ্যাভেন বলেন, হালকা প্রকৌশল, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্প খাতে বিপুল দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ায় এসব খাতে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হলেও তা চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে এ চাহিদা পূরণ করতে হবে।
এজন্য কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে প্রয়োজনভিত্তিক জনশক্তি গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি।
আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণে প্রবৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকঋণের সুদের হার দুই অংকে থাকা, দুর্বল রাজস্ব আহরণ ও দুর্বল প্রতিযোগিতাসক্ষমতাকে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এজন্য মন্দ ঋণ কমিয়ে আনাসহ আর্থিক খাতের সংস্কার, রাজস্ব আহরণ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ, সময় ও ব্যয় কমিয়ে মানসম্পন্ন উপায়ে সরকারি অর্থ ব্যয়ের পরামর্শ দেওয়া দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যবসায় সহজীকরণ, চলমান উদ্যোগ অব্যাহত রাখা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।