দেশের চামড়া শিল্প এলডব্লিউজি সনদ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে

597

ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : দেশের চামড়া শিল্প লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় আশা করছে, আগামী বছরের শুরুর দিকে চামড়া শিল্পের জন্য বাংলাদেশ এলডব্লিউজি সনদ অর্জনে সক্ষম হবে।
‘সাভার (ঢাকা) চামড়া শিল্পনগরির কেন্দ্রিয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) এ প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ কথা জানানো হয়।
আজ মঙ্গলবার সাভার শিল্প নগরীর সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভার উদ্ধৃতি দিয়ে আজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সাভার (ঢাকা) চামড়া শিল্পনগরির কেন্দ্রিয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) সকল কাজ সম্পন্ন হবে। এ শিল্পনগরীর সকল কাজ শেষ করার পর আগামী বছরের শুরুতেই লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জনের লক্ষ্যে নিরীক্ষার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আজকের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিম, বিসিক’র চেয়ারম্যান মোঃ মোশ্তাক হাসান এনডিসি, বুয়েটের টিম লিডার অধ্যাপক ড. মোঃ দেলোয়ার হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টে সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশ্ড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী জিতেন্দ্রনাথ পাল, এপেক্স গ্রুপের প্রতিনিধি মেজর (অবঃ) মির্জা আনোয়ারুল কবিরসহ শিল্প মন্ত্রণালয়, বিসিক ও চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চামড়া শিল্পনগরির উন্নয়ন কাজের সর্বশেষ অবস্থা বিস্তারিত মূল্যায়ন করা হয়। এ সময় জানানো হয়, ইতোমধ্যে কেন্দ্রিয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ শতকরা ৯৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সিইটিপি’র ৪টি মডিউল চালু রয়েছে এবং এগুলো বর্জ্য পরিশোধনের কাজ করছে।
এ সভায় উল্লেখ করা হয়,সিইটিপি’র কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন করার জন্য যন্ত্রপাতিসহ আমদানিযোগ্য মালামাল ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে। বর্তমানে এগুলো স্থাপনের কাজ চলছে। সিইটিপি’র ডি-ওয়াটারিং হাউজের নয়টি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং এগুলোতে স্লাজ কেক তৈরি হচ্ছে। বাকি ৬টি ইউনিটের কাজ ২৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে।
সভায় আরও জানানো হয়, সিইটিপি’র ক্রোম সেপারেশনের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সিইটিপিতে স্থাপিত ৭টি জেনারেটরের সব ক’টি সচল রয়েছে এবং সকল পাম্প চালু আছে। এর সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি ও অটোমেশনের কাজ নভেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে।
একইসাথে এ শিল্পনগরীতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২টি ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের লক্ষ্যে ড্রয়িং ও ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হবে। এছাড়া, সিইটিপি’র অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সভায় এলডব্লিউজি সনদ অর্জনের লক্ষ্যে এখন থেকে মক অডিট পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অডিটের ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিক গুণগত পরিবর্তনের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সভায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাই-প্রোডাক্ট উৎপাদনকারীদের অনুকূলে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে যেসব প্লটে এখনও ট্যানারি কারখানা স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে বাই-প্রোডাক্ট উৎপাদনকারীদের প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
সভায়,শিল্পমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প-কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী চামড়া শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যে কোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। যারা শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ নিয়ে কারখানা স্থাপন করেননি, তাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারির শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি’র বাস্তবায়ন কাজ সন্তেÍাষজনক গতিতে এগিয়ে চলছে। সরকার চামড়াখাতে রপ্তানি বাড়াতে সিইটিপি’র পাশাপাশি পুরো শিল্পনগরীকে এলডব্লিউজি সনদের আওতায় নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানীতে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে শিল্পমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারির শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং শিল্প সচিব চামড়া নগরীর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প প্লটে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।