রোহিঙ্গাসহ কয়েক লাখ রাষ্ট্রহীনের সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন : ইউএনএইচসিআর

615

ঢাকা, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা এবং ভারতের আসাম রাজ্যে রাষ্ট্রহীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘুসহ বিশ্বের লাখ লাখ লোকের নাগরিকত্ব হারানো এবং রাষ্ট্রহীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা লোকগুলোর নাগরিকত্ব সমস্যার দ্রুত সমাধানে জরুরি প্রদক্ষেপ প্রয়োজন।
জাতিসংঘ কর্র্মকর্তা গ্রান্ডি বলেন, এ ধরনের লোকদের ঝুকি কমানোর প্রচেষ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এ ধরনের লাখ লাখ লোকের সংকট নিরসনে নেয়া প্রচেষ্টা দ্বিগুণ বাড়াতে হবে।
জাতিসংঘ হাইকমিশনার গ্রান্ডি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এসব লোকদের রক্ষা করতে না পারলে লাখ লাখ লোকের জীবন বিপন্ন এবং জাতীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইউএনএইচসিআরএ’র বার্ষিক নির্বাহী কমিটির বৈঠক শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।
গ্রান্ডি বলেন, রাষ্ট্রহীন লোকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি দেশের ব্যবস্থা গ্রহণ বেড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সকল রাষ্ট্রহীন লোকদের উচ্ছেদ চেষ্টা ঠেকানোর প্রচেষ্টায় মারাত্মক সংকটের কাছাকাছি উপনীত হচ্ছে।
পাঁচ বছর আগেও এ ধরনের লোকদের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির তেমন চেষ্টা ছিল না। তবে এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে রাষ্ট্রহীন লোকদের সংকট অবসানের সম্ভাবনা দেখা দিলেও তা কখনো সার্বিকভাবে সংকট অবসানের কাছাকাছিও নেই।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি না ঘটলেও ক্ষতিকর জাতীয়তাবাদের আবির্ভাব এবং উদ্বাস্তু ও অবিভাসন বিরোধী মনোভাবের উদ্ভব, আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় উল্টো আরো ঝুঁকি বাড়ছে।
জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০২৪ সালের মধ্যে রাষ্ট্রহীনতা সংকটের অবসানে ২০১৪ সালে একটি প্রচারণা শুরু করে। রাষ্ট্রহীনদের ওপর বড় ধরনের দুটি প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। এ দুটি হলো রাষ্ট্রহীনদের মর্যাদা সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন ১৯৫৪ এবং রাষ্ট্রহীনদের সংখ্যা হ্রাসের ওপর জাতিসংঘ কনভেনশন ১৯৬১।
প্রচারণার প্রথম পাঁচ মাসে রাষ্ট্রহীন ২ লাখ ২০ হাজারের অধিক লোক কিরগিজিস্তান এবং কেনিয়া, তাজিকিস্তান ও থাইল্যান্ডে স্থান পেয়েছে।
বিশ্বের প্রথম দেশ কিরগিজিস্তান জুলাই মাসে সকল রাষ্ট্রহীন লোকদের বিষয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। মাদাগাস্কার এবং সিয়েরালিয়নে সন্তানের সাথে বাবা মার নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রেখে তাদের নাগরিক আইন সংস্কার করা হয়।
তবে ২৫টি দেশে এখনো এ ধরনের আইন কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। সারাবিশ্বে রাষ্ট্রহীন নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমূহের মধ্যে এটি একটি অন্যতম। সকল নাগরিকত্ব আইনই জন্ম নেয়া রাষ্ট্রহীন শিশুদের রক্ষা কবজ নয়। রাষ্ট্রহীনতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলতে পারে।
আজ জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউএনএইচসিআর’র নির্বাহী কমিটির বিশেষ সেশনে যোগদানকারী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধিরা ২০২৪ সালের মধ্যে রাষ্ট্রহীনতার অবসানে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বৈঠকে যোগদানকারী অন্যান্যদের মধ্যে জাতিসংঘ ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল আমিনা মোহাম্মদ, ইউএনএইচসিআর’র শুভেচ্ছা দূত ক্যাট ব্লানচিট, ব্রিটিশ টিভি সাংবাদিক এবং উপস্থাপক অনিতা রাণী, সাবেক রাষ্ট্রহীন উদ্বাস্তু কর্মী মাহা মামো, জাতীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক ওএসসিই হাইকমিশনার ল্যাম্বার্টো জ্যানিয়ার এবং অন্যরা রয়েছেন।