বাসস প্রধানমন্ত্রী-৫ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি) : সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি আশা করা হচ্ছে : মোদি

332

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৫ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি)
হাসিনা-মোদি-বিবৃতি
সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি আশা করা হচ্ছে : মোদি

দুই প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থায় ঘনিষ্টভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বিশেষকরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তাঁরা, উন্নত দেশগুলোকে ২০৩০-এর এজেন্ডা অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমগুলিতে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
দুই দেশের জন্যই আঞ্চলিক এবং উপআঞ্চলিক সহযোগিতা অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র বলেও দুই নেতা একমত হন। এই লক্ষ্য অর্জনে সমস্ত সদস্য দেশের সম্মিলিত সমৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কার্যকর বাহন হিসেবে বিমসটেকের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করার বিষয়েও তারা সম্মত হন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং এই সফরের সময়সূচি কূটনৈতিক মাধ্যমে চূড়ান্ত করার বিষয়েও উভয়ে একমত হন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উভয় নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। কেননা, এই সম্পর্ক গভীর ঐতিহাসিক এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা এবং অনুধাবনের ভিত্তিতে একটি সর্বাত্মক দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে প্রতিফলিত করে যা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ছাড়িয়ে যায়।
দুই প্রধানমন্ত্রীই প্রচলিত এবং অপ্রচলিত উভয় ক্ষেত্রেই পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন এবং এই অপরিবর্তনীয় অংশীদারিত্ব যা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে শুরু হয়েছিল তা উত্তোরাধিকারকেও বাড়িয়ে তোলে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প বাস্তবায়নে ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, উভয় দেশই দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এটি সহজিকরণের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যকার ভ্রমণের জন্য দরকারী বিষয়গুলোকে সহজ করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকার করায়, বিশেষ করে যে সমস্ত বাংলাদেশী ভারতে সড়ক বা রেলপথে ভ্রমণ করেন তাদের জন্য, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান এবং পারষ্পরিক সহমর্মিতার চেতনায় বিদ্যমান স্থল বন্দরগুলোতে বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের জন্য সকল ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতেও আহ্বান জানান।
দুই নেতাই একমত হন যে, বৈধ কাগজ পত্রের ভিত্তিতে স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশীদের ভারতে প্রবেশ/বাহিরের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিধি নিষেধগুলো এখনও বলবৎ রয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে দূর করা হবে। আখাউড়া (ত্রিপুরা) এবং ঘোজাডাঙ্গা (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে তা শুরু হবে।
এলডিসিভুক্ত দেশগুলো থেকে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তিতে ভারত অভিনন্দন জানায় বাংলাদেশকে। এ প্রসঙ্গে উভয় পক্ষই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি’র (সিইপিএ) সম্ভাবনা নিয়ে যৌথ সমীক্ষা চালুর কাজ দ্রুত করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষই স্বীকৃতি দিয়েছে যে আকাশ, জল, রেল, সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে এবং এর বাইরেও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য পারস্পরিক উপকারী সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় দুই দেশের পানি সম্পদ সচিবদের আলোচনায় উভয় নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পরবর্তী সময়ে জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের পাশাপাশি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি ১৯৯৬ অনুসারে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারেজ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের শর্তাদি প্রণয়ন করা হয়েছে।
উভয় নেতা রেলওয়ে খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার অপরিসীম সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁরা আগস্ট ২০১৯ সালে দুই দেশের রেলপথ মন্ত্রীদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার বিষয়টিও সন্তুষ্টির সাথে উল্লেখ করেন।
উভয় নেতা জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এক ধাপ এগিয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রীই মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাতায়াত প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ বারে এবং বন্ধন এক্সপ্রেসের যাতায়াত প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ বারে বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মোদী বাংলাদেশে রেলওয়ের রোলিং স্টক সরবরাহের জন্য এবং বাংলাদেশে সৈয়দপুর ওয়ার্কশপের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগুলোর সমাপ্তি ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
শেখ হাসিনা অনুদানের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি ব্রডগেজ এবং মিটার গেজ লোকোমোটিভ সরবরাহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান। এটি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
দুই নেতা আগামীতে দুটি বর্ষপূর্তি উদযাপনেও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। যার একটি হচ্ছে- ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন।
উভয় প্রধানমন্ত্রীই ২০২০ সালে তাঁর জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফিচার ফিল্মের সহ-প্রযোজনার জন্য এনএফডিসি এবং বিএফডিসির মধ্যে চুক্তির কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও প্রদান করেন।
বাসস/এএইচজে/অনু-এফএন/০০৩০/-এবিএইচ