ইসি’র এনআইডি বিভাগ প্রায় এক ডজন কর্মকর্তাকে নজরে রেখেছে

330

ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত সন্দেহভাজন প্রায় এক ডজন ব্যক্তিকে নজরে রেখেছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগ।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আজ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এনআইডি অনুবিভাগ অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। এনআইডিকে সুরক্ষিত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা-ই করা হবে। ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী সন্দেহভাজন অন্তত এক ডজন ব্যক্তিকে নজরে রাখা হয়েছে।’
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপচেষ্টায় ক’জন এবং কারা জড়িত এদের নাম তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ না করে তিনি বলেন, এই সংখ্যা ১৫ জনের বেশি না।
রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার অপতৎপরতায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জালিয়াত চক্র ধরতে তিনি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা নেবেন বলে উল্লেখ করেন।
মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের মুল ডেটাবেজ সুরক্ষিত রয়েছে। যারা এখানে ঢুকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এই অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করেছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে রোহিঙ্গদের ৬১ জনের তালিকা পেয়েছি যারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে- তারা কিভাবে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলো। কারা তাদের সহযোগিতা করলো। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ল্যাপটপ চুরির বিষয়ে তিনি জানান, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে ৪টি এবং বিভিন্ন সময় আরো তিনটি ল্যাপটপ হারিনো গেছে। এইসব ল্যাপটপ দিয়ে ইসির সার্ভারে প্রবেশ করা যাবে না। কারণ সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসি নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দেয়া মডেম লাগবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র ভিপিএন এর সংযুক্তির মাধ্যমে মডেম ব্যবহার করে তথ্য আপলোড করা সম্ভব। শুধু ল্যাপটপ দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এ মডেম কর্মকর্তার বাইরে অন্যকে হস্তান্তরের সুযাগ নেই। কোনো কর্মকর্তা যদি এ অপতৎপরতায় কাউকে মডেম ব্যবহারের অনুমতি দেয় কিংবা কারো অবেহলায় হয়ে থাকে-তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অতীতে এনআইডি কাজে সম্পৃক্ত ছিল তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলে মহাপরিচালক জানান।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধের কারণে ইসি থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছে তাদের তালিকা করে সেই তালিকা ধরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। ইসির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে কোনোভাবেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া না হয়। ডাটা এন্টি অপারেটর হিসেবেও যাতে তারা নিয়োগ না পায়। চাকরিচ্যুতদের কঠোর নজরদারির রাখা হয়েছে।’
মহাপরিচালক জানান, ‘ইতোমধ্যে বিষয়টি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা কোনোভাবেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ করতে না পারে।
নতুন নিরাপত্তা পদক্ষেপের বিষয়ে সাইদুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গাদের ভোটারও হওয়া ঠেকাতে ইসির কর্মকতৃাদের বদলি করা হবে যাতে তারা একই জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করতে না পারে। একই সঙ্গে নিবন্ধন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড অন্যরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি করা হবে। যদি কেউ হস্তান্তর করে তাহলে এই ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোহিঙ্গারা কোনোভাবে ভোটার হতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ভোটারে হালনাগাদ তথ্য ২০২০ সালের ২ জানুযারি খসড়া প্রকাশ হবে। সব যাচাইবাছাই করেই মূল সার্ভারে ডেটা যাবে। সেক্ষেত্রে ডেটাবেইজ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তথ্যভান্ডার পুরোপুরি সুরক্ষিত।
এসময় এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন, আইসিটি মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন, ৫ সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি উইং পরিচালক খোরশেদ আলম, কারিগরি বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি পরিচালক ইকবাল হোসেন ও সদস্য এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।