ডিএনসিসি’র ৩ হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা : মশক নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা

366

ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এবার দেশে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রবণতা বেশি থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে বিগত যেকোন অর্থবছরের তুলনায় এখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে এই খাতে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এই বাজেট ঘোষণা করেন। এটা মেয়রের দায়িত্বে আসার পর মো. আতিকুল ইসলামের প্রথম এবং মেয়র হিসেবে এই মেয়াদের শেষ বাজেট।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৮২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে ডিএনসিসির এ বাজেট ছিল দুই হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ডিএনসিসিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আয় এক হাজার ১০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ৩১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশী। আশা করা যাচ্ছে, এ অর্থ বছরে গৃহ কর, বাজার সালামী, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর ও সড়ক খনন ফি বাবদ আয় বৃদ্ধি পাবে। এই অর্থ বছরে সরকারী অনুদান (থোক) থেকে পাওয়া যাবে ১০০ কোটি টাকা, সরকারি বিশেষ অনুদান থেকে ৫০ কোটি টাকা এবং সরকারী বা বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে পাওয়া যাবে ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট আয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।’
মেয়র বলেন, গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছিল ৮৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। যদিও অর্থবছর শেষে ডিএনসিসি’র আয় ৭৯৩ কোটি টাকা। তবে অন্যান্য আয় ৭ কোটি ধরা হলেও তা বেড়ে হয়েছে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সরকারি অনুদান থেকে ১৫০ কোটি টাকা ধরা হলেও হয়েছে ৫৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, সরকারি বিশেষ অনুদান থেকে ৫০ কোটি টাকা ধরা হলেও এ খাত থেকে এসেছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ডিএনসিসি মেয়র ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিয়ন্ত্রণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও পানি সরবরাহসহ অন্যান্য রাজস্ব ব্যয় ৫৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। একটি সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এ বাজেটে অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা।
মেয়র বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে নিজস্ব উৎস ও সরকারি অনুদান থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭১ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং সরকারী বা বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট থেকে ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৬৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এবার দেশে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রবণতা বেশি থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণে বিগত যেকোন অর্থবছরের তুলনায় এখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে এই খাতে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতবারের বাজেটে এখাতে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে এবার বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ১৮২ শতাংশ। তিনি বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ পরামর্শের আলোকে ইতোমধ্যে অধিকতর কার্যকর মশার কীটনাশক প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ওয়ার্ড ডেঙ্গু সেল গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টিতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মশক নিধনে কীটনাশক প্রয়োগ কার্যক্রম মনিটরিং করার লক্ষে আধুনিক ট্রাকিং পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র মশক নিধন কার্যক্রম সারা বছর চলমান থাকবে জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে এখাতে বরাদ্দ বাড়াবে সিটি করপোরেশন। এ সময় তিনি মশক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
আমরা পরিকল্পিপত ঢাকা গড়তে চাই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেক চলমান চিরুনী অভিযান শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য চিরিুনী অভিযানের মতো নগরের সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ চলাচলের জন্য অর্থাৎ ফুটপাতকে অবৈধ স্থাপনা মুক্ত করতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করা হবে। ফুটপাতে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না। কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেটদেও সহায়তায় এই কাজ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাথে এ ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। ডিএমপি এ ব্যাপাওে সহয়তা করবে। ফুটপাত অবমুক্ত করার জন্য আমরা অভিযানে নামবো।
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় বাতির ব্যবস্থা করার জন্য আগামী দেড় বছরে ৪২ হাজার এলইডি বাতির ব্যবস্থা করা হবে। যা স্বীকৃত উন্নত দেশ থেকে আমদানী করা হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সিটি এলাকায় চারটি পার্ক সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি আটটি পার্ক উন্নয়নের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব পার্কেও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হবে।
বাজেট ঘোষণার সময় সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই সহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।