রহমত-রশিদের স্মরণীয় দিনে ভালো অবস্থায় আফগানিস্তান

258

চট্টগ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেল আফগানিস্তান। আর সেটি করলেন ডান-হাতি ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দেশের প্রথম সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। রহমতের মত এই টেস্টে স্মরনীয় কীর্তি গড়েছেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে অধিনায়কত্ব করার বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। রহমত-রশিদের এমন স্মরনীয় কীর্তিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯৬ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭১ রান করেছে সফরকারী আফগানিস্তান। রহমত ১০২ রানে আউট হন। ৮৮ রানে অপরাজিত আছেন সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম-নাইম হাসান। ২ উইকেট শিকারে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত ১শ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েছেন তাইজুল।
ম্যাচের আগের দিনই স্পষ্ট ছিলো, চট্টগ্রামের উইকেট হতে যাচ্ছে স্পিন রাজ্য। তাই একাদশে স্পিনারদের প্রাধান্য থাকেব বুঝাই যাচ্ছিলো। তারপরও আশা ছিলো, অন্তত একটি পেসার তো খেলবেনই। কারন স্পিন রাজ্য হবার পরও তিন বছর আগে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে একটি করে পেসার খেলানো হয়েছিলো। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কে হবেন সেই ভাগ্যবান পেসার? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে এবং দলের ভেতরে।
অবশেষে আজ সকালে সকল উদ্বেগের অবসান ঘটলো। তবে চোখ কপালে উঠে যাবার মতই ঘটনা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলে নেই কোন পেসার। চারজন বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সাথে দু’জন অকেশনাল। অর্থাৎ মোট ছয়জন স্পিনার। মিডিয়াম পেসার বলতে ছিলেন সৌম্য সরকার। তাই এই টেস্টে পেসারদের টিপস দেয়ার মত কোন ঝক্কি ঝামেলা নেই পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ডটের। ঘুড়ে ফিরে আগামী পাঁচদিন অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন তিনি।
যাই হোক, স্পিন নির্ভর বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ নিতে টস জিতে প্রথমেই ব্যাটিং বেছে নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। অধিনায়ক হবার পর এটিই তার প্রথম ম্যাচ। তবে বিরল বিশ্বরেকর্ডের মালিক হলেন তিনি। সবচেয়ে কম ২০ বছর ২৫০ দিন বয়সে টেস্টে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন ।
রশিদের বিশ্বরেকর্ডের আবহ’র মাঝে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুলকে দিয়ে বাংলাদেশের বোলিং শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে নিজেও থেমে থাকেননি। পরের ওভারে অপরপ্রান্ত দিয়ে নিজেও চলে আসেন আক্রমনে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৪২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ম্যাচের দুই প্রান্ত দিয়ে বাঁ-হাতি স্পিনাররা আক্রমন শুরু করলেন।
পিচের অবস্থা কিছুক্ষণ বুঝে ফেলার পর প্রথম ১২ ওভারে দলের চার বিশেষজ্ঞ স্পিনারকে ব্যবহার করে ফেলেন সাকিব। মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম হাসানকে দিয়ে হাত ঘুড়ান তিনি।
বাংলাদেশের চার স্পিনারকে প্রথম ১২ ওভারে দক্ষতার সাথে সামাল দিয়েছেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও এহসানউল্লাহ। এতটাই সর্তক ছিলেন যে, ১২ ওভারে মাত্র ১৯ রান তুলেন তারা। কিন্তু ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল। মিডল ও লেগ স্টাম্পের মাঝে বলকে পিচ করান তাইজুল। ব্যাকফুটে গিয়ে তাইজুলের ঘুর্ণিকে সামলাতে না পেরে বোল্ড হন এহসানউল্লাহ। এই উইকেট শিকারের সাথে-সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুত ১শ শিকারের রেকর্ড গড়েন তাইজুল। আগের রেকর্ডটি ছিলো সাকিবের। নিজের ২৮তম ম্যাচে ১শ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। আর তাইজুল করলেন ২৫তম ম্যাচে। মোহাম্মদ রফিক ও সাকিবের বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ১শ উইকেট শিকার করলেন তাইজুল।
১৯ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দলকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জাদরান ও রহমত। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ২৯ রানের জুটি গড়েন জাদরান ও রহমত। ২১ রান করা জাদরানকেও শিকার করেন উইকেট শিকারে সেঞ্চুরি করা তাইজুল।
জাদরানের সাথে না পারলে চার নম্বরে নামা হাসমতউল্লাহ শাহিদির সাথে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রহমত। কিন্তু এই জুটিও ২৯ রানের বেশি করতে পারেনি। পঞ্চম বোলার হিসেবে আক্রমনে এসে ১৪ রান করা শাহিদিকে ফিরিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
৭৭ রানে ৩ উইকেট পতনের পর চাপে পড়ে গিয়েছিলো আফগানিস্তান। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব। আক্রমনাত্মক ফিল্ডিং-এর পাশাপাশি দুই প্রান্ত দিয়ে বোলিং পরিবর্তন করেন তিনি। কিন্তু সাকিবের পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেন রহমত ও সাবেক অধিনায়ক আসগর। বাংলাদেশ বোলারদের সামনে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তারা। দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্যে বাংলাদেশের স্পিন বিষে কাবু হননি রহমত-আসগর। তাই দলের স্কোর দু’শর কাছাকাছি পৌঁছেও যায়।
তবে এ সময় আফগানিস্তানের স্কোরের চেয়ে সবার মধ্যমনি ছিলেন রহমত। কারন নিজের সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন তিনি। সেই সাথে টেস্ট আফগানিস্তানের প্রথম সেঞ্চুরির অপেক্ষা। অবশেষে টেস্টে আফগানিস্তানকে প্রথম সেঞ্চুরি এনে দেন রহমত। নিজেদের ইনিংসের ৭০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশের স্পিনার নাইমকে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রহমত। নিজের ১৮৬তম বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। টেস্ট ফরম্যাটে দেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখলেন রহমত। এমন দুর্দান্ত অর্জনের পরই আউট হয়ে যান তিনি। নাইমের বলে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ১০টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮৭ বলে ১০২ রান করেন রহমত।
দলীয় ১৯৭ রানে ও ৭০তম ওভারের তৃতীয় বলে রহমতকে শিকারের পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশ। দলের সেই আত্মবিশ্বাস দ্বিগুন করে দেন নাইম। ঐ ওভারের শেষ বলে আফগানিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেন নাইম। বোল্ড হন নবী। এমন অবস্থায় ৩ বলের ব্যবধানে ও দলীয় ১৯৭ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে যায় আফগানিস্তান।
তবে আফগানদের বেশিক্ষণ চিন্তায় রাখেননি আসগর ও উইকেটরক্ষক আফসার জাজাই। দ্রুতই উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেন তারা। দিনের শেষভাগে কোন সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। ফলে ৭৪ রানে অবিচ্ছিন্নই থেকে যান আসগর-জাজাই জুটি। নিজের প্রথম ও দেশের হয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা থেকে ১২ রান দূরে থেকে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেন আসগর। তার ১৬০ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। জাজাই ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯০ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন।
স্কোর কার্ড (টস-আফগানিস্তান) :
আফগানিস্তান : ২৭১/৫, ৯৬ ওভার (রহমত ১০২, আসগর ৮৮*, জাজাই ৩৫*, নাইম ২/৪৩, তাইজুল ২/৭৩)।