বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মন্ত্রিসভায় হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশন আইনের খসড়া অনুমোদন

244

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-মন্ত্রিসভা-হাউজ বিল্ডিং
মন্ত্রিসভায় হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশন আইনের খসড়া অনুমোদন

‘আকাশপথে পরিবহন মন্ট্রিওল কনভেনশন ১৯৯৯ আইন ২০১৯’র খসড়া এদিন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
সচিব বলেন, আমাদের বিমান ব্যবস্থাপনা আন্তর্জাতিকভাবে অনেকগুলো সংস্থা কতৃর্ক বিভিন্ন কনভেনশন, চুক্তি এবং প্রটোকল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এই মন্ট্রিওল কনভেনশন হলো বিশেষত যাত্রীদের যে অধিকার সে সম্পর্কিত একটি কনভেনশন।
তিনি বলেন, এখানে বিমানে আরোহনকারী যাত্রীর মালামাল পরিবহন, কোন কারণে যাত্রী মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা- মন্ট্রিওল কনভেনশন নির্ণয় করে।
শফিউল আলম বলেন, এই মন্ট্রিওল কনভেনশনে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষরকারী হলেও এতদিন এটি আইনে পরিনত করা হয়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের যাত্রীদের সুরক্ষা প্রদানের জন্যই আইনটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
সচিব বলেন, নতুন এই আইনে মোটামুটিভাবে মন্ট্রিওল কনভেনশনের বিধিবিধানগুলোই যুক্ত করা হয়েছে। মূল ফোকাসটি হচ্ছে- বিমানে যদি যাত্রী, ব্যাগেজ, কার্গো পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে যাত্রীর মৃত্যু হয়, বা সে আঘাত প্রাপ্ত হয় বা ফ্লাইট বিলম্বিত হয়, ব্যাগেজ প্রাপ্তি বিলম্ব হয় বা হারিয়ে যায় বা ক্ষয়-ক্ষতি হয়, কার্গো প্রাপ্তিতে বিলম্ব, হারানো বা ক্ষয়-ক্ষতির ক্ষেত্রে এই আইনসমূহের মাধ্যমে আমরা প্রতিকার পেতে পারি।
এ সময় তিনি উদাহরণ দেন, নেপালে বাংলাদেশের ইউএস বাংলার প্লেন দুর্ঘটনাটি যদি এই কনভেনশনের আওতায় হতো তাহলে যাত্রীরা অনেক গুণ কমপক্ষে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেত একেক জন। যেটি তারা পায়নি। কাজেই বাংলাদেশে এই আইনটি চালু করলে এই পরিবর্তনটি আসবে।
শফিউল আলম বলেন, যাত্রী, ব্যাগেজ এবং কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সসমূহের দায়-দায়িত্বকে খসড়া আইনর বিধান দ্বারা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। আর যাত্রী মৃত্যু বা আঘাতের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আদায় যোগ্য অর্থের পরিমান আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কতৃর্পক্ষ নির্ধারিত ১ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার প্রায় (এক লাখ এসডিআর)। মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার ফ্রাংক (১ ফ্রাংক=সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রাম ওজনের (২২ ক্যারেট) সোনার মূল্যমানের সমান হবে।)
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি কর্তৃক এই আইন বা তদানুযায়ী প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের কোন বিধান লংঘন অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং সেক্ষেত্রে ১০ বছর কারাদন্ড বা অনধিক একশ’ কোটি টাকা অর্থদন্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সচিব বলেন, বিমান এয়ারলাইন্সগুলো যদি যাত্রী মুত্যুর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান না করে তাহলে পুরোপুরি এই জরিমানাটি প্রাযোজ্য হবে এবং যিনি এই এয়ারলাইন্সের মালিক/পরিচালক বা কোম্পানী এটার জন্য দায়বদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, যাত্রী মৃত্যু বা আঘাত, ব্যাগেজ হারানোর ক্ষেত্রে কার্গোপ্রতি ক্ষতিপূরণ হচ্ছে- মৃত্যু বা আঘাতের জন্য আগে দন্ড ছিল ২৫ হাজার ইউএস ডলার (ওয়ারশো কনভেনশন অনুযায়ী)। আমাদের এই আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে, এক লাখ ৬০ হাজার ইউএস ডলার। ব্যাগেজের দন্ড ছিল প্রতি কেজির জন্য ২৫ ইউএস ডলার সেটি ৭০ ইউএস ডলার করা হয়েছে। কার্গো প্রতি কেজির জন্য ২৫ ইউএস ডলার এবং ২৭ ইউএস ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা-২০১৯ এর চূড়ান্ত খসড়াও এদিন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, এর মূল ফোকাসটা হলো ২০২৪ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার রপ্তানীর যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে সেটি যেন অর্জন সম্ভব হয় সেজন্য এইনীতিতে একটি বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ৯টি উদ্দেশে রয়েছে এবং সরবরাহকারী এবং রপ্তানীকারকদের জন্য এর ৩ এর ১০ ধারায় ‘ক্যাস ইনসেনটিভ’ সহ ১৭ ধরণের প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
একই সঙ্গে এদিন মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ ও চেক রিপাবলিকের মধ্যকার স্বাক্ষরিতব্য দ্বৈত কর আরোপন পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন (এই আইন অনুযায়ী যে রাষ্ট্রের মুনাফা সেই রাষ্ট্রেই কর যোগ্য হবে, ডাবল ট্যাক্সেশন পরিহারের জন্য এটি করা হয়েছে) দেওয়া হয় এবং প্যাটেন কোঅপারেশন ট্রিটি বা পিসিটি’র অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে (ভারত ও শ্রীলংকা সহ বিশ্বের ১৫২টি দেশ পিসিটির সদস্যভুক্ত)।
শফিউল আলম বলেন, ১৪তম মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে ১১টি এজেন্ডা ছিল। আর বেশ কিছু বিষয় এদিন মন্ত্রিসভায় অবহিতকরণ করা হয়। সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে শফিউল আলম বলেন, এদিনের মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, এটি সম্ভবত মন্ত্রিপর্যায়ে রয়েছে এবং আমাদের তথ্যমন্ত্রী সহ কয়েকজন মন্ত্রী এ নিয়ে কাজ করছেন।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ওপরে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট (১এপ্রিল ২০১৯ থেকে ৩০ জুন ২০১৯) ও এ দিনের মন্ত্রিসভায় পর্যালোচনা করা হয়। এ সময়ে মন্ত্রিসভার ৭টি বৈঠক হয় এবং ৭২টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং বাস্তবায়িত হয় ৫৯টি সিদ্ধান্ত। আর বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ১৩টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়িত সিদ্ধান্তের হার ৮১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বাস্তবায়নাধীন ১৮ শতাংশ। অনুমোদিত কর্মকৌশল নীতি এই সময়ে একটি অনুমোদিত হয়েছে। সমঝোতা স্মরক বা চুক্তি একটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আর সংসদে ৬টি আইন পাশ হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ৫ বছর মেয়াদি একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। যেটি বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করা হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো.জাকির হোসেন এবং সচিব মো.আকরাম আল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট এই কর্মপরিকল্পনাটি হস্তান্তর করেন।
এদিন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (মোজাফ্ফর) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাবও গ্রহণ করে মন্ত্রিসভা।
বাসস/এএসজি-এফএন/২১৪৫/কেএমকে