বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে বুকের দুধের বিকল্প নেই

282

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশু- বুকের দুধ
শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে বুকের দুধের বিকল্প নেই
ঢাকা, ২৩ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : আজকের শিশুই জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাই একটা দেশ তথা জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শিশুর যতœ নেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিভিন্ন কারণেই কখনো কখনো সেটা সম্ভব হয় না। যেমন রাইমা। রাইমা কাজ করেন ফার্মগেটের এক প্রাইভেট ফার্মে। গত এপ্রিল মাসের তিন তারিখে প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন তিনি। সন্তানের জন্মের তিন মাস পরই চাকরিতে যোগ দিতে হয় রাইমার। কিন্তু বিপাকে পড়েন সন্তানের খাবার নিয়ে। বুকের দুধ (ব্রেষ্ট ফিডিং এর মাধ্যমে) যা রেখে যান তাতে হয় না সন্তানের। আর তাই প্যাকেটজাত দুধ ফিডার দিয়ে খাওয়ানো শুরু করেন রাইমার শাশুড়ী। এতে বাচ্চার খাবারের চিন্তা কিছুটা দূর হলেও কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে রাইমার একমাত্র আদরের কন্যা রাফিজা বিনতে মাইশা।
এদিকে চার মাস বয়সী উজানের বিষয়টিও প্রায় একই। তবে উজানের মা শাহেদা, রাইমার মত চাকরিজীবী নন। কিন্তু উজানের দু’মাস বয়স থেকেই তিনি স্বামীর কাছে গো ধরেন যে, তাদের সন্তানকে বুকের দুধের পাশাপাশি প্যাকেটজাত দুধও ফিডারের মাধ্যমে খাওয়াবেন। তখন থেকেই উজান বুকের দুধের পাশাপাশি ফিডার দিয়ে বাজারের প্যাকেটজাত দুধ পান করছে নিয়মিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে মায়ের বুকের দুধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের কোন বিকল্পই নেই।
তাদের মতে, শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ নিয়মিত পায় সে ক্ষেত্রে বাচ্চার ছয় মাস বয়স পর্যন্ত অন্য কোন খাবার দেয়া যায় না। এসময় অনেক মা’ই চান তাদের সন্তানকে বাইরের দুধ খাওয়াতে। এটা তারা করেন মূলত অজ্ঞাত বশত। যা কখনোই কাম্য নয়। যেসব বাচ্চারা শুরু থেকেই মায়ের দুধ পায় না, একমাত্র তাদের জন্যই এসব প্যাকেটজাত দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ তাদের বেঁচে থাকার জন্যই সেটি দরকার। এছাড়া কোনভাবেই প্যাকেটজাত দুধ মায়ের বুকের দুধের বিকল্প হতে পারে না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান বলেন, মায়ের বুকের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকে। এ ছাড়া মায়ের দুধে আছে শতকরা ৯০ ভাগ পানি। সে জন্য ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট। এমনকি শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত আলাদা পানি পান অথবা অন্য কোন খাবার দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের অনেক মায়েরাই বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মায়েরা বাচ্চার জন্মের দু/এক মাস পরই বাচ্চাকে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। যা কোনভাবেই উচিত নয়। কারন মায়ের বুকের দুধের অ্যান্টিবডি শিশুর প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। শিশুর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করে তোলে।
রহমান বলেন, বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকেও শিশুকে অনেকাংশে দূরে রাখে মায়ের বুকের দুধ। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, অ্যালার্জি প্রভৃতি রোগ থেকে দূরে রাখে। মায়ের দুধে পূর্ণমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে বলে তা শিশুর অস্থির রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া শিশু অসুস্থ হলেও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। মায়ের দুধ পান শিশু মৃত্যুর হারও কমিয়ে দেয়। পরে শিশুর ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
একই হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মনির হোসেন বলেন, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ শিশুর মানসিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, যেসব বাচ্চা প্যাকেটজাত দুধ পান করে তাদের তুলনায় মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুদের মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়। কারন মায়ের বুকের দুধে একজন শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা, প্যাকেটজাত দুধে নেই।
এ বিষয়ে রাইমা বলেন, প্রথম তিন মাস আমি বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছুই দেইনি। কিন্তু চাকরিতে পুনরায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ঘটে বিপত্তি। আমার শাশুড়ীও বয়স্ক মানুষ। তার পক্ষে সন্তানকে সামলানো সত্যিই অনেক কঠিন। আর বাচ্চার খিদে পেলে সে সারাক্ষণই কাঁদতে থাকে। তখন তাকে শান্ত করার অন্য কোন উপায় নেই। আর সকালে ব্রেস্ট ফিডিং’র মাধ্যমে যে দুধ দিয়ে আসি তা সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা বাচ্চাকে প্যাকেটজাত দুধ পান করানো শুরু করি।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/স্বব/১৯৫০/আহো/এসএইচ