বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

492

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-গ্রেনেড হামলা
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানব ঢাল রচনা করে তাঁকে রক্ষার কথা উল্লেখ করে দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধর ময়দানে ব্যবহৃত ‘আরজেস গ্রেনেড’ দিয়ে জনসভায় হামলা হল। গ্রেনেডের স্পিøন্টার এসে হানিফ (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) ভাইয়ের গায়ে ঢুকছে আর সেখান থেকে রক্ত বেয়ে আমার গায়ে পড়ছে। তিনটা গ্রেনেড মারার পর একটু বিরতি। ’
তিনি বলেন, ‘তারপর আবার গ্রেনেড হামলা একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করলো। এই ধরনের একটা পরিস্থিতি দিনে দুপুরে কীভাবে ঘটতে পারে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনার পর তাদের ধারণা ছিল আমি মারাই গেছি। কিন্তু যখন নেমে গাড়িতে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবার হামলা করা হলো। সেখানে মাহবুব (আওয়ামী লীগ সভাপতির নিরাপত্তারক্ষী) ছিল, তার গায়ে গুলিটা লাগলো। গাড়িতেও গুলি লেগেছিল।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরে পড়তে পারতো কিন্তু সেটা ট্রাকের ঢালার সঙ্গে বাড়ি খেয়ে ভেতরে না পড়ে বাইরে পড়ে যায়। গ্রেনেডটা যদি ট্রাকের ভেতরে পড়ে তবে সবাই কিন্তু আমরা সেখানে শেষ হয়ে যাই।’
গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য কারাগার থেকেও অপরাধী আনা হয়েছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, জেলখানায় একটা গ্রেনেড পাওয়া গেছে। যাদের দিয়ে আক্রমণ করিয়েছিল সেই ক্রিমিনালদের কিছু তারা জেলখানা থেকেও সংগ্রহ করেছিল। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসে আবার তাদের ফেরত নিয়ে যায়। কত গ্রেনেড ছিল তাদের কাছে?’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনার পর সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা। সেখানে যে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায় সেটা রাখতে চাওয়ায় সেই অফিসারের চাকরি চলে যায়। এই ঘটনার কোনো আলামতই যেন না থাকে সেই চেষ্টাটাই তারা করেছে।’
বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটকের’ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের চাপে একজন বিচারককে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট সেটাতো তাদের ফরমায়েশি রিপোর্ট।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে একটা সাধারণ মানুষ ধরে নিয়ে আসে, তার নাম জজ মিয়া, তাকে আসামি করা হয়। জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়। কীভাবে জজ মিয়াকে নিয়ে আসে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?’
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন,‘এই ঘটনা, কোটালিপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রাখা, প্রতিটি আক্রমণের আগে খালেদা বলতো আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই ঘটনার আগে বলতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, জীবনে বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। ওরা তো আমাকে মেরেই ফেলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর, বলে একটা কথা আছে। যে অভিশাপ সে আমার জন্য দিয়েছিল, সেটা এখন তার (খালেদা জিয়া) কপালে জুটে গেছে।’
‘স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্টের হত্যাকা-’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলো। আমি ও আমার ছোট বোন রেহানা, আমাদেরকেও হত্যা করা হতো। আমাদের বাসায় গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দুই বোন জার্মানিতে গিয়েছিলাম। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এতিম হয়ে যাই। সব হারিয়ে আমরা আর দেশে আসতে পারিনি। পাসপোর্টটাও জিয়াউর রহমান সরকার রিনিউ করতে দেয়নি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা জাতির পিতার হত্যাকান্ড এবং ১৫ অগাস্টের বিয়োগান্তুক ঘটনার জন্য জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘জিয়া প্রত্যক্ষ অপরাধী। জিয়াউর রহমান ছিল মোস্তাকের বিশ্বস্ত সহযোগী। জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে ১৫ আগস্ট হত্যার বিচারের রাস্তা বন্ধ করেছিল। অপরাধীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।’
একদিন যে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই দেশ আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দৃঢ় কন্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৃত্যু আসবে, সেটা অবধারিত জানি, কিন্তু সেই মৃত্যুভয়ে আমি বসে থাকব না।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেভাবেই দেশের সেবা করে যাব। জাতির পিতার আদর্শে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেটাই আমার চাওয়া।’
বাসস/এএসজি/এফএন/২২৫৫/-এবিএইচ