বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : গৃহকর্মী সোমা আজ খামার করে স্বাবলস্বী

243

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
গৃহকর্মী-উদ্যোক্তা
গৃহকর্মী সোমা আজ খামার করে স্বাবলস্বী
ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস): ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তবে সে জন্য্য প্রয়োজন সদিচ্ছা। এক সময় গৃহকর্মীর কাজ করলেও নিজের শিক্ষা ও সদিচ্ছার কারণেই গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সোমা আক্তর। ত্রিশ বছর বয়সী সোমা আক্তার যখন প্রথম ঢাকা শহরে আসেন তখন তার বয়স বার কি তের। আট ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সোমাকে তার মা শহরে পাঠিয়েছিল তাদেরই এক আত্মীয়ের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে। শহরে এনেই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে ভর্তি করে দেয়া হয় বাসার পাশের এক প্রাইমারী স্কুলে।
বাসার টুকটাক কাজ সেরেই বসে যেত বই নিয়ে। আর বাসার সবার কাছে গিয়ে গিয়ে পড়া বুঝে আসত সোমা। এভাবে ক্লাস টেন পর্যন্ত ভালোই চলছিল সোমার। স্কুলে পরীক্ষার ফলও খুব ভালো। প্রায় প্রতি ক্লাসেই প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের যেকোন একটিতে স্থান পেত সোমা। তার পড়ার আগ্রহ দেখেই বাসার সবাই ভালোবাসত সোমাকে। তার পেশাক-আশাক, আচার-আচরণেও ছিল পরিবর্তনের ছাপ। বাইরের কেউ দেখলে বুঝতেই পারত না যে সোমা গৃহকর্মী। সেও হয়ে উঠেছিল ওই বাসারই একজন।
কিন্তু দশম শ্রেণীতে উঠার একদিন স্কুল ছুটিতে বাড়ী যায় সোমা। বাড়ি যাওয়ার মাত্র তিনদিনের মাথায় সোমার মা ফোন করে জানায় সোমার বিয়ে হয়েছে তাদের পাশের বাড়ীর এক ছেলের সাথে। তার কিছুদিন পর সোমা নিজে ফোন করে জানায় সব ঘটনা। ছেলে এলাকার স্কুলের অফিস সহকারী। অনেকটা জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে।
দু’বছর পরে তাদের সংসারে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। সন্তান হওয়ার পর থেকে তাদের সংসারে শুরু হয় টানাটানি। স্বামী মিলনের যা আয় তার অর্ধেকের চেয়ে বেশী চলে যায় মেয়ের জন্য। এভাবে কিছুদিন চলার পর সোমা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এক জোড়া গাভী কিনে। সেই থেকে শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সোমাকে।
বর্তমানে সোমার ৩৫ টি গাভী, ১০ টি ষাঁড়, ২০ টি ছাগল আর ৩১ টি ভেড়া রয়েছে খামারে। গড়ে তুলেছে নিজের নামে একটি খামার বাড়ী। এসব ছাড়াও নিজের পুকুরে করেন মাছ চাষ। রয়েছে হাঁস আর মুরগী।
সোমা বলেন, একটা সময় ছিল যখন সকাল-বিকেল শুধু টাকার কথা চিন্তা করতাম। আমার জীবনের বড় ভুল ছিল পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করা। কিন্তু সেসময় পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমার কথার কোন দাম ছিল না। আর শহরে আমি যাদের বাসায় ছিলাম, যারা আমাকে নিজের সন্তানের মতই ভালোবেসেছেন তাদের সাথেও যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি।
খামার করার চিন্তা কোথা থেকে আসল, জানতে চাইলে সোমা বলেন, এখানেও কাজে লেগেছে আমার পড়ালেখা। নাইনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আমি কৃষি শিক্ষা নিয়েছিলাম। এসব শিক্ষা আমি সেখান থেকে পেয়েছি। বাকীটা উপজেলা পশু অধিদপ্তরে গিয়ে শিখেছি। তাদের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, শুরুতে বাড়ির সবাই বিরোধীতা করলেও পরে আমার রোজগার দেখে আর বাধা দেয়ার সাহস পায়নি। সবচেয়ে বড় কথা আমার স্বামী তার স্কুলের ডিউটি বাদে প্রায় সবটুকু সময় আমার সাথে খামারে থাকে।
সোমা বলেন, এই খামারের ফলে যে, শুধুমাত্র আমি স্বাবলম্বী হয়েছি তা নয়। আমার খামারে আরো ১৫ জন নারী সার্বক্ষণিক কাজ করে। এছাড়াও গাভীর দুধ বিক্রীসহ বাইরের কাজ করার জন্য তিন জন পুরুষও কাজ করেন সার্বক্ষনিক।
তিনি বলেন, ইচ্ছে ছিল পড়ালেখাটা শেষ করব। কারণ আমার অন্য ভাই-বোনেরা কেউ পড়ালেখা করেনি। আমি যখন সুযোগটা পেয়েছিলাম তখন হাতছাড়া করতে চাইনি। এখন আমার সব হয়েছে। কিন্তু একটাই আফসোস পড়াটা শেষ করতে পারিনি। কিন্তু আমার মেয়ের বেলায় আমি তা হতে দেব না। আগে পড়ালেখা শেষ করাব। তারপর তার যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/১৯০০/আহো/-এসএইচ