বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের গভীর তদন্তে শক্তিশালী কমিশন গঠনের দাবি তথ্যমন্ত্রীর

426

ঢাকা, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ (বাসস) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের ষডযন্ত্রের গভীর তদন্তের জন্য কমিশন গঠনের দাবি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এই দাবি এখন ‘সময়ের দাবি’ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন শক্তিশালী তদন্ত কমিশন দ্বারা গভীর তদন্ত ভবিষ্যত প্রজন্মকে ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী এবং যারা এই ষড়যন্ত্রের পটভূমি তৈরি করেছিল তাদের সম্পর্কে অবহিত করা অপরিহার্য।
মন্ত্রী আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতার পক্ষের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম’ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস-২০১৯ এর আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
ড.হাছান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, পরিকল্পনাকারী এবং ষড়যন্ত্রকারীদের নাম নতুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচন করা উচিৎ উল্লেখ করে বলেন, অন্যথায় নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে অন্ধকারেই থাকবে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর সকল হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য একটি কমিশন গঠনে আলোচকদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, দেশের মানুষ এই ঘটনার অন্তরালে আসল ইতিহাস জানতে চায়।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইকবাল সোবাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে আরো আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া, ইনিস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ এর সভাপতি আবদুস সবুর প্রমূখ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড শুধু ‘শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড’ নয়, বরং এটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বানচালের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে নিহত হয়েছিলেন, যারা কখনও স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বিএফএইজে’র সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভূইয়া এবং কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন।

১৫ আগস্টের পরিবর্তে ১৬ আগস্ট বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণধিকৃত হয়ে এক্ষেত্রে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ জনগণ এই শোকের দিনে বিএনপি নেত্রীর জন্মদিন পালনকে ব্যাপকভাবে ধিক্কার জানিয়ে আসছে। তাই জনরোষের কারণে তারা বাধ্য হয়েই জন্মদিন পালনের দিনটিকে পরিবর্তন করেছে।’
হাছান মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল যদি তাদের প্রধানের জন্মদিনের তারিখই নিশ্চিত করতে না পারে, তবে কিভাবে তারা সামনে এগুবে।’
আওয়ামী লীগ দেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে অভিযোগ করেছেন তার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকারই অধিকাংশ পাটকল বন্ধ করেছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বৃহত্তম পাটকল আদমজি জুট মিলসহ অধিকাংশ পাটকল বন্ধ করে দেয়। অপরদিকে ১৯৯৬ ও ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই একের পর এক ওই বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালু করেছে। এমনকি শ্রমিকদের অনেক কারখানার মালিকানা দেয়া হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার পর কোরবানীকৃত পশুর চামড়া ইস্যু নিয়ে নির্জলা মিথ্যা কথা না বলার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিগত দশ বছরের তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে। তাই এবার কোরবানীও হয়েছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি।
ড.হাছান বলেন, কিন্তু পরিবেশের সুরক্ষার জন্য সরকার কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় ট্যানারীর সংখ্যা বাড়ানো যায়নি।
তিনি আরো বলেন, কিছু অতিমুনাফা লোভী এই অতিরিক্ত চামড়ার সুফল একাই ভোগ করতে চায়।
মন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রে দোষীদের চিহ্নিত করতে সরকার তদন্ত শুরু করেছে।
ড. হাছান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু’র কন্যা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একই সাথে দেশের ৬৩টি জেলায় ধারাবাহিক সিরিজ বোমা হামলা ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে
ড.আরেফিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সব সময়ই আগস্ট মাসকে বেছে নিয়েছে। তাই আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।