বাজেট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে অর্জিত জাতীয় অগ্রগতির বস্তুনিষ্ঠ চিত্র : সরকারি দল

797

সংসদ ভবন, ২০ জুন, ২০১৮ (বাসস) : প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, বাজেটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত প্রায় এক দশকে জাতীয়ভাবে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত সাফল্যের চিত্র বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
তারা বলেন, এর পাশাপাশি এ বাজেটে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উপনীত হওয়ার পথকে আরো বেগবান করবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বিকেল ৩টা ০৭ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন এবং আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
গত ৭ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার চতুর্থ দিনে আজ ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সরকারি দলের আফতাব উদ্দিন সরকার, এ কে এম ফজলুল হক, মো. তাজুল ইসলাম, সামশুল হক চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, আবদুল মান্নান, তানভীর ইমাম, আবদুল ওয়াদুদ, ডা. এনামুর রহমান, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, বেগম লায়লা আরজুমান বানু, নূরজাহান বেগম, ডা. দীপু মনি, সফুরা বেগম, ফিরোজা বেগম (চিনু), এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, টিপু সুলতান ও জাসদের বেগম শিরীন আখতার অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বর্তমান বাজেটে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে যেসব বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো- বিদ্যুৎ, জ্বালানী, রেলপথ, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং নতুন রপ্তানী বাজার সৃষ্টি। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রাক্কলন ও লক্ষ্যসমূহ বাস্তব এবং অবশ্যই এগুলো বাস্তবায়নযোগ্য। কারণ আমাদের জিডিপির আকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছিল মাত্র ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭, এখন তার ৫ গুণেরও বেশি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি।
তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার ৫৭ কোটি, এখন তা ৭ গুন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এডিবির আকার ছিল মাত্র ১৯ হাজার কোটি টাকা, এখন তা ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান সরকার বারবার প্রমাণ করেছে যেকোন উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন করা বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব এবং এই বাজেটও বাস্তবায়নের সক্ষমতা এই সরকারের রয়েছে।
তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তানদের ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, তারা রাষ্ট্রযন্ত্র ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দুর্নীতিতে আপাদমস্তক লিপ্ত হয়ে নিজেদেরকে ‘টু পার্সেন্ট’ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করিয়েছে তাদের পক্ষে কখনো বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
একটি বাস্তবধর্মী বাজেট উপস্থাপনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী আমাদের দেশে সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার এ্যাসেম্বল হওয়া মোবাইলের উপর থেকে সম্পূর্ণ কর মওকুফ করা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবি জানান।
সরকারি দলের সদস্য ডা. দীপু মনি প্রাইভেট সেক্টরে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেন। তিনি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও মানব সম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো, ট্যাক্স আদায়ে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা এবং ‘কর বাহাদুর’ এর পরিবর্তে ‘কর বীর’ পুরস্কার প্রবর্তনের দাবী জানান।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের আয়ের মূল উৎস এখন ‘ক্যাসিনু’ বা জুয়া। দেশের মানুষকে নিয়ে যাতে তারা আর জুয়া খেলতে না পারে এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেশের যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে চলমান মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানান।
জাসদের বেগম শিরিন আক্তার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের উপর উপর ভরসা রাখতে রাখা যায়, যেমন বঙ্গবন্ধুর উপর ভরসা রেখে ১৯৭১ সালে দেশের মানুষ দেশকে স্বাধীন করেছে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তিনি ন্যয্যতা ও সমতার কথা বলেছেন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন সততা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। এ জন্য আদর্শের জোট ১৪ দলকে চোখের মনির মতোই লালন করতে হবে।
শিরীন আখতার বলেন, খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন, তিনি কোন রাজনৈতিক মামলায় নয়, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এখানে কোন ধরনের সমঝোতার কোন সুযোগ নেই। মামলা মোকাবেলা করেই তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। খালেদা জিয়া দেশের সংবিধান, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাস করে। বিএনপি আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে সময় মতো শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।