বাসস প্রধানমন্ত্রী-৭ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সিউলের সহায়তা কামনা করেছেন

515

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৭ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
হাসিনা-লী-বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সিউলের সহায়তা কামনা করেছেন

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সমুদ্র তীরবর্তী দেশ উল্লেখ করে বলেন, সামুদ্রিক বাণিজ্য আরো সহজ করতে একটি দ্বিপক্ষীয় শিপিং চুক্তি সম্পাদন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইডিসিএফ-এর আওতায় কোরীয় এক্সিম ব্যাংক তহবিলের সঙ্গে একটি সমন্বিত ‘মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বর্তমানে অনেক বাংলাদেশী ‘এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস)’-এর আওতায় কোরিয়ার মেনুফ্যাকচারিং খাতে কাজ করছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কৃষি, নির্মাণ, ফিশারিজ ও সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতগুলো বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য পুনরায় খুলে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতা বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, একাডেমি ও গবেষণা অভিজ্ঞতা এবং গবেষণালব্ধ তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে একটি উচ্চ শিক্ষা বিনিময় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি মূল্যবান অংশীদার হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সূচিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন করে এমন বৈশ্বিক উদ্যোগসমূহ সমর্থন করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনএনপিটি) ও সার্বিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল গঠনে সকল আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ জোরালোভাবে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, ‘সিটিবিটি ও এনএনপিটি পূর্ণ বাস্তবায়নে আমাদের সমর্থন, আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার থেকে উৎসাহিত। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমনকে স্বাগত জানাই। ’
কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইওনকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার চেতনার ভিত্তিতে কোরিয়ার প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে মূল্য দেই।’ তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ২০১০ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সফরের কথা স্মরণ করছি, যখন আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি সামগ্রিক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন সমতা ও পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা জোরদার এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সিদ্ধান্তও ছিল।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের নেতৃত্বে কোরিয়া নিজেকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর ঘটাচ্ছে।’ দেশকে উন্নয়নের উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ কোরিয়ার দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীত হতে ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন করছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোরিয়ার সহায়তা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)-এর অধীনে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেতে আগ্রহী। ’
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান অন্যান্যের মধ্যে প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
বৈঠকের আগে ২ প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে একান্ত বৈঠক করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগার গেটে লি নাক-ইওনকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
বাসস/এসএইচ/অনু-এইচএন/২২৫৫/বেউ/-এবিএইচ