নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে কাল মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারত

718

কলম্বো, ১৭ মার্চ ২০১৮ (বাসস) : নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের ফাইনালে আগামীকাল মুখোমুখি হবে দুই সফরকারী দল বাংলাদেশ ও ভারত। স্বাগতিক হয়েও ফাইনালের টিকিট না পাওয়ায় শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচটি দশর্ক হিসেবেই দেখতে হবে শ্রীলংকাকে। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিরোপা জয়ের জন্য মাঠে নামবে বাংলাদেশ ও ভারত।
বিধ্বস্ত অবস্থায় শ্রীলংকার মাটিতে নিদাহাস ট্রফি খেলতে এসেছিলো বাংলাদেশ। চলতি বছরের শুরু দুর্দান্ত করার পর হারের বৃত্ত ঘুরপাক খাচ্ছিলো টাইগাররা। গেল জানুয়ারিতে নিজেদের মাটিতে শ্রীলংকা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে লিগ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচই জিতে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু লিগ পর্বের শেষ ও ফাইনালে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। দু’বারই শ্রীলংকার কাছে হার মানে তারা। তাই ভালো শুরুর পরও ত্রিদেশীয় সিরিজে রানার-আপ হয়েই থাকতে হয় মাশরাফির বাংলাদেশকে।
ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে হয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে দু’ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ড্র করতে পারলেও, ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট আড়াই দিনে হেরে যায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন দলটি। ফলে সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে আঙ্গুলের ইনজুরিতে পড়ায় টেস্ট সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেন মাহমুদুল্লাহ।
টেস্ট সিরিজ হারের ক্ষত নিয়ে দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। সিরিজের দু’ম্যাচেই হারের ঢেঁকুর তুলে টাইগাররা। তাই হারতে-হারতে বিধ্বস্ত হয়ে শ্রীলংকার মাটিতে নিদাহাস ট্রফি খেলতে নামে বাংলাদেশ।
নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ভারতকে। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে জ্বলে উঠতে পারেনি টাইগাররা। ভারতকে ১৪০ রানের টার্গেট দিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই জয় তুলে নেয় মাহমুদুল্লাহ’র দল।
শ্রীলংকার ছুড়ে দেয়া ২১৫ রানের টার্গেট ২ বল বাকি রেখেই স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ৩৫ বলে অপরাজিত ৭২ রানের সাথে ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের ৪৭ ও লিটন দাসের ৪৩ রানের কল্যাণে রেকর্ড গড়ে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। নিজেদের টি-২০ ইতিহাসে এত বড় টার্গেট তাড়া করে এই প্রথম ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ।
এরপর লিগ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেও ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশ। ফলে লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারাতে পারলেই ফাইনালের টিকিট পাবে টাইগাররা। এমন সমীকরনে গতকাল চোখ জুড়ানো এক জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ’র দায়িত্বশীলতা-বুদ্ধিমত্তার কাছে হার মানে শ্রীলংকা। শেষ ২ বলে ৬ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। ম্যাচের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে জয়ের স্বাদ দেয়ার পাশাপাশি ফাইনালের টিকিটও পাইয়ে দেন ম্যাচের সেরা মাহমুদুল্লাহ। তাই তো ম্যাচ শেষে মাহমুদুল্লাহ ও দলের জয়কে অবিশ্বাস্য বলছেন এ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেয়া সাকিব, ‘মাহমুদুল্লাহ যা করেছে তা অবিশ্বাস্য। যেমন অবিশ্বাস্য জয়টাও।’ আগামীকাল শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।
পক্ষান্তরে টুর্নামেন্টে লিগ পর্বে দু’বার বাংলাদেশকে ও একবার শ্রীলংকাকে হারায় ভারত। লংকানদের কাছে হেরে এবারের আসরে যাত্রা শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু পরের তিন ম্যাচেই জয় তুলে নেয় রোহিত শর্মার দল। তাই প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে উঠে টিম ইন্ডিয়া। জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ফাইনালেও জিততে চায় ভারত। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা খুব সহজ হবেনা মনে করছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শক্তিশালী দল হিসেবেই বাংলাদেশ স্বাগতি শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে উল্লেখ করে শর্মা বলেন, ‘বাংলাদেশ অবশ্যই শক্তিশালী দল। তাদেরকে হারাতে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। তবে আমরা গ্রুপ পর্বে যেভাবে খেলেছি ফাইনালেও সেভাবে খেলতে চাই। আমাদের এখন লক্ষ্য শিরোপা জয়। শিরোপা জয়ের ব্যাপারে দলের সবাই আত্মবিশ্বাসী।’
তিন দলকে নিয়ে অন্য কোন আসর বা ত্রিদেশীয় সিরিজ নামে ১১টি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এবারই প্রথম ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজে খেলতে নামলো টাইাগাররা। প্রথম আসরেই ফাইনালে টাইগাররা। আর এই প্রথম আসরকে শিরোপা দিয়ে রঙ্গিন করাই এখন বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ দল : সাকিব আল-হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, লিটন কুমার দাস, আবু হায়দার রনি, আবু জায়েদ রাহী, আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল ইসলাম অপু।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, সুরেশ রায়না, মানিশ পান্ডে, দিনেশ কার্তিক, দিপক হুদা, ওয়াশিংটন সুন্দর, যুজবেন্দ্রা চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, বিজয় শংকর, শারদুল ঠাকুর, জয়দেব উনাদকট, মোহাম্মদ সিরাজ ও ঋসভ পান্থ।