বিএনপির সময় বাংলাদেশ ছিল ঋণ নির্ভর দেশ : তথ্যমন্ত্রী

664

চট্টগ্রাম, ১৫ জুন, ২০১৯ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ ছিল ঋণ নির্ভরতার দেশ। অথচ বর্তমানে বাজেটের সামান্য অংশ ঋণ নির্ভর বাকিটা আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাজেট নিয়ে সিপিডি ও বিএনপির বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রেখে গিয়েছিলেন। এরপর বিএনপি পাঁচ বছর দেশ চালানোর পর খাদ্য ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ৪০ লাখ টনে। দারিদ্র্য সীমার নিচে লোকসংখ্যা একজনও কমেনি এবং বাংলাদেশ ছিল ঋণ নির্ভরতার দেশ। অথচ বর্তমানে বাজেটের মাত্র সামান্য অংশ ঋণ নির্ভর বাকিটা আমাদের আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করছি।’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ও শহর ইউনিটের সহযোগিতায় ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র এই আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিষদ সদস্য ডা. শেখ সফিউল আজমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আবদুল জব্বার, ডা. মিনহাজ উদ্দিন তাহের, ইসমাঈল হক চৌধুরী ফয়সাল ও মহসিন উদ্দিন।
তিনি সিপিডি ও বিএনপি’র প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গত দশ বছরে দেশ এতো কিভাবে এগিয়ে গেলো? আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে আপনারা যে সমালোচনা করেন তা পরিহার করবেন। অবশ্যই আপনারা ভুলত্রুটি তুলে ধরবেন তবে ১০ বছর ধরে প্রতি বাজেট ঘোষণার পর একই ধরনের গদ বাঁধা সমালোচনা আর নয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১০ বছরে প্রতি বাজেটের পর পত্রিকা উল্টালে দেখা যায় বিএনপি একই ধরনের সমালোচনা ও বক্তব্য রাখছেন। আর সিপিডি’র বক্তব্য যা বিএনপির বক্তব্যও তা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১০ বছর ধরে ভুল বাজেট দেয়ার কারণেই কি দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে? মানুষের মাথাপিছু আয় ৬শ’ ডলার থেকে সাড়ে তিনগুণ বেড়ে ২ হাজার ডলারে উন্নিত হলো? স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হলো? ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন তখন দেশের লোকসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি। তখন ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আজকে ১৭ কোটি লোকসংখ্যার বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি পুষিয়ে খাদ্যে উদ্বৃত্ত। সরকার এখন খাদ্য রপ্তানির চিন্তা করছে। এগুলো কি সরকারের অর্জন নয়?’
তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী প্রশংসা করতে পারলেও বিএনপি ও সিপিডি সরকারের প্রশংসা করতে পারে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রতি বাজেটের পর এটি গণমুখী বাজেট নয় ও দরিদ্র মানুষের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনেনি বক্তব্য রাখেন সংবাদ সম্মেলন করে। অথচ বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখবেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সাথে রাষ্ট্রকে একটি সামাজিক ওয়েল ফেয়ার এস্টেটে নিয়ে যেতে চায় সরকার। কিন্তু তারা এসব দেখেন না।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষ বাস করে মাত্র ২০ শতাংশ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে দারিদ্র্যসীমা ২৫ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ৩০ শতাংশ। স্বাস্থ্য, মানব উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সমস্ত সূচকে আমরা পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বহুদুর এগিয়ে। অনেক সূচকে ভারতের চেয়েও এগিয়ে। এজন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলে বাংলাদেশ আজকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বহুদুর এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কেনিয়াতে বলেছেন বাংলাদেশের কাছ থেকে আফ্রিকার দেশ গুলোর অনেক কিছু শেখার আছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রশংসা করতে না পারার মূল কারণ হচ্ছে, যারা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামে এধরণের সমালোচনা করেন তারা হচ্ছেন ১/১১ এর কুশিলবদের অন্যতম। ১/১১এর সরকারের সময়ে তারা নানাভাবে সুবিধাভোগী ছিলেন। বিএনপির গাত্রদাহ হচ্ছে আমরা করতে পারলামনা তারা করতে পারছে, তাই ‘দেখতে যারে নাহি তার চলন বাঁকা’ এই ধারণা থেকেই এধরণের সমালোচনা করছেন।
দেশের স্বার্থে সবাইকে একসাথে মিলে কাজ করার আহবান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা যুক্তি ও তর্ক ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় বাস করি। এখানে যুক্তি তর্ক থাকবে, সমালোচনাও থাকবে। তবে সমালোচনা যেন অন্ধ ও বিদ্বেষ প্রসুত না হয়। সেজন্য সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।’