২০১৯-২০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন

535

ঢাকা, ১৩ জুন ২০১৯ (বাসস) : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে ১ লাখ ৬১ হাজার ২শ’ ৪৭ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেছেন। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৩ হাজার ৫শ’ ৫ কোটি টাকা বেশি।
অর্থমন্ত্রী আজ জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক বাজেট উপস্থাপন করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সম্ভাব্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য পৃথক জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও ১৬টি বিভাগকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তিনি আজ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৪৮তম বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, নারী উন্নয়নে মোট বাজটে বরাদ্দ ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ২৭ হাজর ২৪৮ কোটি টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭শ’ ৪২ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী উন্নয়ন বাজেট বার্ষিক গড়ে প্রায় ২২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ১ লাখ ৬১ হাজার ২শ’ ৪৭ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৩০.৮২ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৫.৫৬ শতাংশ। নারী উন্নয়ন বাজেটের জন্য নির্বাচিত ৪৩ টি মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মোট বাজেটের একটি বৃহৎ অংশ নারী উন্নয়নে ব্যয় হয়ে থাকে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও জেন্ডার বাজেটকে তিনটি অংশে ভাগ করে নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর প্রথম অংশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি মন্ত্রণালয় ও পাঁচটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় অংশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আটটি মন্ত্রণালয় ও একটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় , যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় , স্থানীয় সরকার বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় , দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। এতে ১৫ টি মন্ত্রণালয় ও ১০ টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবছর জেন্ডার বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জায়গায় জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথম ৪টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেন। ঐ বছর নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিলো ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে ১০ টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০ টি মন্ত্রণালয়ে ৪২হাজার ১’শ ৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৫ টি মন্ত্রণালয়ে ৫৪ হাজার ৩’শ ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে মোট ৪৩ টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য একাদশ বারের মতো জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন।