একনেকে ১,৬১৫.৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন

951

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পুরাতন ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম মুন্সীগঞ্জে পরিবেশ বান্ধব স্থানে সরিয়ে নিতে ১,৬১৫.৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আজ বৈঠকে অনুমিত ১০,১১৫.৭৭ কোটি ব্যয়ে মোট ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪,৪০৫.৭৮ কোটি টাকা যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার, ৪৮৯.৫০ কোটি টাকা আসবে সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকী ৫,২২০.৪৯ কোটি টাকা দেবে প্রকল্প সহায়ক সংস্থা।
৭টি প্রকল্পের মধ্যে তিনটি নতুন প্রকল্প অপর ৪টি সংশোধিত প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নি দুর্ঘটনার পরে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রকল্প সংশোধন করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ২০২২ সালের জুন নাগাদ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম মুন্সীগঞ্জে কম জনবসতি ও পরিবেশ বান্ধব স্থানে সরিয়ে নেয়া। এ লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রায় ৩১০ একর জায়গা নিয়ে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাক স্থাপন করা হবে। প্রকল্পে প্রায় ২,১৫৪ টি শিল্প পার্ক থাকবে, এখানে প্রায় ৫০,০০০ লোকের কর্মসংস্থান কবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে শিল্প পার্কে প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়,পুরান ঢাকায় প্রায় ৪ হাজার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম রয়েছে। দাহ্য এসব রাসায়নিক পদার্থ ওই এলাকার লোকদের জন্য মারাত্মক অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকান্ড এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই প্রকল্প গ্রহন করা হয়। বৈঠকে ৭৯.৪২ কোটি টাকায় অস্থায়ী রাসায়নিক মজুদের জন্য গুদাম নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প কর্পোরেশন (বিসিআইসি)২০২০ সালের জুন নাগাদ কদমতলীর শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক মজুদের জন্য গুদাম নির্মাণ করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরান ঢাকায় কোন রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম থাকবে না- তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুন্সিগঞ্জে রাসায়নিক শিল্প পার্কে রাসায়নিক শিল্প স্থাপন ও স্থানান্তর করতে হবে। তিনি ২৪৭৯.৪১ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন প্যারালেল পাইপলাইন কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট (প্রথম সংশোধিত) অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন কোন জমির উপর দিয়ে যাবে তা চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী ভূমি অধিগ্রহণে আবাদী জমি এড়ানো এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন।
৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায় সমাজকল্যাণ ভবন নির্মাণের অনুমোদনে প্রধানমন্ত্রী এই ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্প হচ্ছে ৩৯৭১.২৯ কোটি টাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প (৩য় সংশোধিত) ১৭৪৭.৮৮ কোটি টাকায় দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ প্রকল্প (৩য় সংশোধিত) এবং ১৪৭.৫৬ কোটি টাকায় নীলফামারী জেলায় চোরালকাটা নদী ও বুড়ীতিস্তা নদী কেন্দ্রিক প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীবর্গ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।