বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : কোন রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা আমার নীতি নয় : প্রধানমন্ত্রী

555

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সংবাদ সম্মেলন-প্রশ্নোত্তর
কোন রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা আমার নীতি নয় : প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ফুপাতো ভাই এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর জেষ্ঠ্য সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর কলম্বোর সিরিজ বোমা হামলায় নিহত হবার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং ঘটনায় আহত জায়ানের বাবাসহ সকল আহতের আরোগ্য কামনা করেন।
সরকার দেশীয় জঙ্গিবাদকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে বলেও এসময় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে জঙ্গিবাদ নিয়ে আশঙ্কা এখনো পুরোপুরি দূর হয়ে যায়নি বলেও জানান।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ শুধু প্রশাসন কিংবা গোয়েন্দাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এর জন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ কোনো আশঙ্কায় আছে কিনা-সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সব সময়ই উদ্বিগ্ন হওয়ার আছে। নিউজিল্যান্ড একটি শান্তির দেশ হিসেবে আমরা জানি। কিন্তু সেখানেও এই ধরনের ঘটনা ঘটল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর বাংলাদেশে তো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ লেগেই আছে। জাতির পিতাকে হত্যা, জেলখানায় জাতীয় নেতাদের হত্যা, সামরিক শাসকের আমলে হত্যা, ২০০১ সালের পর হত্যা, দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যাযজ্ঞ সবই সন্ত্রাস।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট সজাগ আছি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল রাতেও সবাইকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছি। তবে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। শুধু গোয়েন্দা দিয়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘লুকোচাপার কিছু নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি, তারপরও আশঙ্কা আছে। আমরা বিভিন্ন সময় তথ্য পাই, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।’ এ সময় তিনি সবাইকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
ধর্মের নামে আত্মঘাতী হামলাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না আত্মঘাতী হামলা করে তারা কী পাচ্ছে। তারা নিজেরাই কী পাচ্ছে, ধর্মকে কী দিচ্ছে আর দেশকেই বা কী দিচ্ছে!’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে কী হলো? একজন মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে গুলি করার মুহূর্ত সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কী বীভৎস! কী বীভৎস মানসিকতা! সে একজন খ্রিস্টান। আর এখানে (শ্রীলঙ্কায়) যারা শনাক্ত হয়েছে, তারা মুসলমান।’
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সাথে সাথে আমরা মিয়ানমারের সাথে আলোচনাও চালাচ্ছি। সেখানে আমাদের একটা চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে এদেরকে ফেরত নেবে। ’
তিনি বলেন, ‘একটা তালিকাও হলো এবং সে তালিকাটাও ইউএনএইচসিআরও অনুমোদন করলো কিন্তু যে মুহূর্তে রোহিঙ্গা যাওয়ার কথা সেই মুহূর্তে তারা প্রতিবাদ শুরু করলো তারা যাবে না। সমস্যাটা দাঁড়িয়ে গেছে এখানে। কিছু যদি আমরা পাঠাতে পারতাম, পাঠাতে শুরু করতাম তাহলে হয়তো এটা অব্যাহত থাকতো। কারণ এভাবে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসান চরে স্থানান্তরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢিলেঢালা মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বেশ শক্তভাবে সবাইকে বলছি- আমরা স্থান দিয়েছি, সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। সামনে বর্ষাকাল সমাগত, তাই এদের যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কে নেবে?’
তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের বর্ষাকাল, যেকোন সময় পাহাড় ধস হয়, আমাদের সাইক্লোন হতে পারে, আমাদের জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যেটা আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে। এই এতগুলো মানুষ সেখানে। যদি এদের কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটে এর জন্য দায়ী কে থাকবে। এসব সংগঠনগুলোকেও কিছুটা দায়ভার নিতে হবে। এবং জাতিসংঘকেও আমি সেই কথা জানিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে যেটা আশঙ্কাজনক যে এদেরকে খুব সহজে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। সহজে এদেরকে হায়ার করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা আমরা চালাচ্ছি এবং আমরা চাই এরা তাদের ঘরে ফিরে যাক। এখানে একটা মানবিক দিক রয়ে গেছে, আমরা তো এদের ওপর চাপ দিতে পারি না।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের যে সমস্ত সংস্থাগুলো আছে যারা উদ্বাস্তু নিয়ে কাজ করে বা মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করে। বা বিভিন্ন সংস্থার যারা। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। পাশাপাশি ভাসানচরে যে উন্নয়নটা আমরা করেছি সেই ছবিটাও তাদের দেখিয়ে আমরা বলেছি এখানে তারা যেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারত এদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা হয়তো ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে না। তবে আমাদের সঙ্গে যখন আলোচনা হয় তখন তারাও চায় যে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক। তাদের পক্ষ থেকে যতটুকু মিয়ানমার সরকারকে বলা প্রয়োজন তারা তা বলছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করেছে তাদেরকে আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি। যে তারা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করতে চায়। আমার প্রস্তাব তাদের কাছে যে আপনারা যা কিছু করবেন তাদের জন্য- মিয়ানমারের মাটিতে করেন।
তিনি বলেন, ‘রিফিউজি থাকলে কিছু লোক ওই রিফিউজি লালন পালনের দিকে যতটা না আন্তরিক হয়, তাদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক হয় না। এখানেও কিছু সমস্যা আছে।’
তিনি বলেন, আমি খুব খোলামেলা বলতে চাই, এই রিফিউজিরা যে অবস্থায় থাকে তাতে করে এরা ফেরত যেতে চাইলেও বা ভাসানচরে যেতে চাইলেও অনেক সংস্থা আছে তারাই পাঠাতে চায় না। কারণ বিভিন্ন ধরনের সংস্থা, এনজিও থেকে শুরু করে অনেকেই এখানে (কক্সবাজারে) ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিতে আসে, আমার যেটা ধারণা ওই জায়গাটাতেই সমস্যাটা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে যেভাবে ঘরগুলো তৈরি করা, এরা কিছু জীবন জীবিকারও সুযোগ পাবে। ওখানে যে জায়গা আছে আমরা ১০ লক্ষকে সুন্দরভাবে রাখতে পারবে। সেখানেই সাইক্লোন শেল্টারও করে দিয়েছি, সেখানে স্কুল হতে পারে, হাসপাতালও হবে। সেখানে রিলিফের মালপত্র রাখতে গুদামঘরও করা হয়েছে। ওখানে সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা আছে।
সরকার প্রধান বলেন, ভাসানচরে যদি রোহিঙ্গারা না যায় ওখানে আমরা আমাদের দেশের লোকদের জীবনজীবিকার ব্যবস্থা করে দেবো। সেখানে ট্যুরিস্টের জায়গা হবে। ওরা না গেলে আমাদের লোকদের সুন্দর থাকার ব্যবস্থা করে দেবো।
সম্প্রচার শিল্প নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও অনেকে নতুন চ্যানেলের অনুমোদন চাইছে। তথ্যমন্ত্রীর তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি আরো কেউ নতুন চ্যানেল চাইলে দিয়ে দেওয়ার (অনুমতি) পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে করে আরো কিছু লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি, স্যাটেলাইটও হয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও টিভি চালানো যায়। তিন মাসের জন্য বিনা পয়সায় (টিভি চ্যানেল) চালানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না। অথচ বিদেশি জায়গায় অনেক টাকা দিচ্ছে। কীভাবে আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অল্প খরচে টেলিভিশন চালাতে পারে সেজন্য কথা চলছে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার যুগ। যারা ভালো অনুষ্ঠান করবে তারা টিকে থাকবে। ভালো খবর যারা দেবে, তাদের চ্যানেল মানুষ দেখবে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ সুতরাং গ্রাহক কখনও কমবে না বরং বেশি হবে।
নবম ওয়েজবোর্ড-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়েজবোর্ডের ব্যাপারে সরকারের যা করণীয়, তা সরকার করেছে, বাকিটা মালিকপক্ষের, সেখান থেকে সাংবাদিকরা যা আদায় করে নিতে পারেন, সেটা তাদের ব্যাপার।
বাসস/এএসজি-এফএন/২২১৫/-এইচএন