দেশে অধিকহারে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

1012

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশে অধিকহারে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করার পর থেকেই ব্যাপকভাবে বেসরকারি খাতকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এবং সারাদেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। সেইসঙ্গে প্রতিটি এলাকায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু উৎপাদনই করবো না। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে দেশে সৃষ্ট বাজারে তা যেমন সরবরাহ করতে হবে তেমনি বিদেশে নতুন নতুন বাজারও আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ইনস্টিটিউট এবং স্থাপনার উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে উদ্বোধনকৃত এসব ইনস্টিটিউট এবং স্থাপনাগুলো হচ্ছে- মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, গোপালগঞ্জ, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, কিশোরগঞ্জ, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ, জাতীয় প্রাণি সম্পদ ও পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট এবং আঞ্চলিক রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার, গোপালগঞ্জ, হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ, সরকারি ভেটেরেনারি কলেজ, কেলকুচি সিরাজগঞ্জ এবং মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়ে ডকইয়ার্ড, মৎস্য বন্দর,চট্টগ্রাম।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করা গেলে আমাদের গৃহিনীদের কোটা-বাছার ঝামেলা অনেকাংশে কমে গিয়ে রান্নার সময় সাশ্রয় হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, এটা আবার বিদেশেও রপ্তানী করা যাবে। কেননা, বিদেশে এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এটা কোনদিনও কমবে না।
প্রায় ৯০ লাখের ওপর আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যে দেশেই থাকুক আর সে দেশের খাবার যত ভালই হোক না কেন, তারা কিন্তু খুঁজে ফেরে দেশের মাছ-তরকারিটা বা ফলটা কোথায় পাওয়া যায়। অনেকে আবার এগুলোর ব্যবসাও করেন।
তিনি বলেন, আমরা যত বেশি আমাদের ফসল উৎপাদন এবং উৎপাদিত ফসল প্রক্রিয়াজাত করতে পারবো তত আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের রপ্তানী করতে পারবো।
তিনি এ সময় বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে উৎপাদনমুখী করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মৎস্য এবং প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইসুল ইসলাম মন্ডল প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে একটি ভিডিও তথ্যচিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশে দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে আনার উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, এক সময় দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশ বানিয়ে রাখা হত। কারণ, তখন যারা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতাসীন ছিল তারা নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত ছিল এবং তারা মনে করতো দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলে আর বিদেশ থেকে ভিক্ষা পাওয়া যাবে না।
খাদ্যের সাথে সাথে পুষ্টিতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তাঁর সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি একান্তভাবে দরকার। আমরা চাই আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ সুস্বাস্থ্যেও অধিকারী হবে, কর্মক্ষম হবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য আমিষের যে প্রয়োজন সেটা মেটানো একান্তভাবে দরকার এবং সেদিকেই আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী এসময় জাতির পিতার বক্তৃতা থেকে ‘আমাদের মাটি আছে, পানি আছে, প্রাণি সম্পদ আছে, মানুষ আছে, আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো’ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষের মৌলিক চাহিদাসহ সবধরণের চাহিদা মেটানেরও আমরা চেষ্টা করছি।’
দেশীয় প্রবাদ ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের দেশে এখন সব থেকে প্রয়োজন দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যা করতে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।