ইউনাইটেডকে উড়িয়ে দিয়ে শেষ চারে বার্সেলোনা

380

বার্সেলোনা, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ (বাসস) : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দু’টি ভুলকে পুঁজি করে লিওনেল মেসি করেছেন দুই গোল, আর এই গোলেই ক্যাম্প ন্যুতে গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চার নিশ্চিত হয়েছে স্বাগতিক বার্সেলোনার।
ভাল একটি শুরুর পরেও ইউনাইটেড মাত্র চার মিনিটের মধ্যে কার্যত মেসির কাছে পরাজিত হয়েছে। অসতর্ক এ্যাশলে ইয়ংয়ের ভুলে এবং পরবর্তীতে গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার সুবাদে ১৬ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে মেসি দুটি গোল উপহার পেয়েছেন। ৬১ মিনিটে ফিলিপ কুটিনহোর কার্লিং শটে বার্সেলোনা ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। আর এতে প্রথম লেগে ১-০ গোলে জয়ী বার্সেলোনা দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০’তে এগিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। মেসির পাশাপাশি সম্ভবত মৌসুমের সেরা পারফরমেন্স দিয়ে কুটিনহো নিজেকে পুরো ম্যাচেই প্রমাণ করেছেন। তাদের দৃঢ়তায় ইউনাইটেড আরো বড় ব্যবধানে পরাজয়ের লজ্জা পেতে পারতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন গোলের স্বস্তিদায়ক পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে সফরকারীরা।
বার্সেলোনার কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে বলেছেন, ‘প্রথম পাঁচ মিনিট আমরা কিছুটা অস্তস্তিতে ছিলাম। কারণ তারা দারুণভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। কিন্তু বাকি ৮৫ মিনিট আমরা ভালই খেলেছি।’
ম্যাচের শুরুতে মার্কাাস রাশফোর্ডের শট ক্রসবারে লেগেছে, কিন্তু তারপর পুরো ম্যাচে ইউনাইটেডের তেমন কোন ভাল সুযোগ নজড়ে আসেনি। সুযোগ দুরে থাক উল্টো নিজেদের কয়েকটি ভুলে বার্সার জয় নিশ্চিত হয়েছে। যদিও গোলগুলোর পিছনে মেসির অবদানও ছিল। মেসি বলেই হয়ত ভুলগুলোর সুযোগ শতভাগ কাজে লেগেছে।
ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড কোচ ওলে গানার সুলশার বলেছেন, ‘আমরা সকলেই আজ একটি বিষয়ে একমত হয়েছি কোনকিছুই রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবেনা। বার্সেলোনা কিংবা এই মানের কোন দলের সমকক্ষ হতে হলে আগামী কয়েক বছর আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।’
এই নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়ালো ১১০-এ। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ১২৬ গোলের বিপরীতে হয়তোবা তিনটি অতিরিক্ত ম্যাচে মেসির সামনে এই পার্থক্য কমানোর সুযোগ আসবে। আয়াক্সের কাছে দিনের আরেক ম্যাচে পরাজিত হয়ে জুভেন্টাসের বিদায় ঘটায় বার্সা সমর্থকরা সেটাও উদযাপন করেছে।
সুলশার হয়তবা তার স্ট্রাইকারদের আরো বেশি সতর্ক হবার তাগিদ দিবেন। রাশফোর্ড, এন্থনি মার্টিয়াল, রোমেলু লুকাকু ও এ্যালেক্সিস সানচেজ মিলে যেখানে মৌসুমে ৪২টি গোল করেছেন সেখানে মেসি একাই করেছেন ৪৩ গোল। এতেই মূলত পার্থক্যটা দৃশ্যমান।
ক্যাম্প ন্যুতে ম্যাচ শুরুর প্রায় ঘন্টাখানেক আগে মাঠের পাশে দেখা গেছে ইউনাইটেডের সাবেক বস এ্যালেক্স ফার্গুসনকে। শিষ্যদের কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করতেই তার আগমন। রায়ান গিগস ও সুলশারের সাথে করমর্দন করে ফার্গুসন হয়ত বার্সা বধের নিজস্ব টিপস তাদের দিয়েছেন।
সেই টিপসের গুনেই কি-না ম্যাচ শুরুর প্রথম আট মিনিট ইউনাইটেড ছিল দুর্দান্ত। ঐ সময়টা মূলত বার্সাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এমনকি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পল পগবার পাস থেকে রাশফোর্ড প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রসবার ইউনাইটেডের ভাগ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এরপরের আট মিনিট ছিল বার্সাময়। ইভান রাকিটিচকে ফাউলের অপরাধে ফ্রেডের বিপক্ষে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিলেও ভিএআর প্রযুক্তি তা বাতিল করে দেয়। ১৬ মিনিটে ইয়ংয়ের ভুলে মেসি বল নিয়ে ফ্রেডের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। দ্বিতীয় গোলটি ছিল আরো সহজ। কুটিনহোকে আটকাতে গিয়ে ফ্রেড ও স্কট ম্যাকটোমিনের কাছ থেকে বল পেয়ে যান মেসি। ডান পায়ের জোড়ালো শটটি আটকানো কোন ব্যপারই ছিল না ডি গিয়ার। কিন্তু তার পরিবর্তে মেসির ভাগ্যে জোটে দ্বিতীয় গোল। বিরতির ঠিক আগে তৃতীয় গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বার্সেলোনা। লাইনের উপর থেকে সার্জি রবার্তোর শট কোন রকমে রুখে দেন ডি গিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লুইস সুয়ারেজের কাটব্যাক থেকে মেসি হ্যাটট্রিকের সুযোগ নষ্ট করেন। তবে ৬১ মিনিটে কোন ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা কুটিনহো। নিজেদের জয়ের পাশাপাশি তুরিন থেকে জুভেন্টাসের বিদায়ের সংবাদে পুরো ক্যাম্প ন্যু যেন উৎসবের রঙে মেতে উঠে। কাতালানরা ইতোমধ্যেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে এই বছরটা তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।