সংবাদ শিরোনাম 
|
|
ফরিদপুর, ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ (বাসস): যশোর সেনানিবাসের পতনের পর দখলদার পাক বাহিনী কামারখালী-মাগুরা দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদী পার হয়ে নিকটবর্তী ফরিদপুর হেডকোয়ার্টারের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। বিভিন্ন দিক থেকে এসে তারা এখানে নিজেদের শক্তি সংহত করার চেষ্টা করে।
কিন্তু মুক্তি বাহিনী কামারখালী-ফরিদপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দখলদার বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে তাদের অনেককে হত্যা ও তাদের সরঞ্জাম ধ্বংস করে।
৯ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন নাসিমের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর প্রায় ৪০ জনের একটি দল করিমপুর ব্রিজের কাছে পলায়নপর দখলদারদের একটি লরির ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু দ্রুত সেখানে দখলদার বাহিনীর অপর একটি দল যোগ দেয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা চাদপুরের ধোপাডাঙ্গা গ্রামে চলে আসে। পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু নিয়ে তাদের ঘেরাও করে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট দলটির সঙ্গে পাক বাহিনীর বিশাল বহরের মধ্যে এক অসম যুদ্ধ হয়। মাতৃভূমির মুক্তির অঙ্গীকারে দীপ্ত দেশপ্রেমিক তরুণরা কয়েক ঘণ্টা দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
করিমপুরের এ যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী স্থানীয় ইয়াসিন কলেজের ছাত্র ও ক্রীড়াবিদ কাজী সালাউদ্দিন, মেসবাহ উদ্দিন, আবদুল ওহাব, শামসুদ্দিন মোল্লা, মঈন উদ্দিন, আবদুল হামিদ শাহাদত বরণ করেন। তারা সবাই কলেজ ছাত্র।
আহত সালাউদ্দিন ও মেসবাহ উদ্দিন যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন দখলদাররা তা পুড়িয়ে দেয়।
যুদ্ধের সময় সালাউদ্দিনকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসা মুক্তিবাহিনীর অন্যতম নেতা হেমায়েত উদ্দিন আহত হয়। তার উরুতে বুলেট বিদ্ধ হয়।
এ যুদ্ধে মমিন ও তাবিবুর রহমানও আহত হন। পরে হেমায়েত উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের সচিব হয়েছিলেন।
করিমপুরের যুদ্ধে ইদ্রিস মোল্লা, রুনু, আবু বকর সিদ্দিক, আমিনুর রহমান ফরিদ, কাজী ফরিদ উদ্দিন (সালাউদ্দিনের ছোট ভাই) বেঁচে যান।
বর্তমান ক্রীড়া সংগঠক আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, যুদ্ধের শেষ প্রান্তে করিমপুরের যুদ্ধ মুক্তিবাহিনীর জন্য ছিল বিরাট এক ক্ষতির ঘটনা। আগুনে পুড়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ১৬ ডিসেম্বরের পর শহরের আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।