বাজিস-১ : জয়পুরহাটে ময়না বেগমের ভাগ্য বদলে দিয়েছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প

292

বাজিস-১
জয়পুরহাট-একটি বাড়ি একটি খামার
জয়পুরহাটে ময়না বেগমের ভাগ্য বদলে দিয়েছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ২৫ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : ময়না বেগম, বয়স ৪০। জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল দামথর গ্রামের এক ভাগ্যহত নারী। সংসারে তখন অভাব। ওই সময়ে প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর মিলে বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের। অসহায় ময়না বেগম সহ দামথর গ্রামের ৬০ নারীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হিসাবে ২০১৪ সালে ভর্তি হন এবং পরে ওই সমিতির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ময়না বেগম। কিছু দিন পরেই সঞ্চয়ের সঙ্গে প্রথম পান ৫ হাজার টাকা ঋণ। যা বর্তমানে ৩ লাখ টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সফল নারী হিসেবে। স্বামীর সংসারে বাড়ি ভিটা ছাড়া কিছুই ছিল না। প্রথম ঋণের টাকায় একটি সেলাই মেশিন কিনে কাজ শুরু করেন। এরপর পেছনে তাকাতে হয়নি ময়না বেগমকে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি ছাগল- হাঁস মুরগী পালন করে সংসারে নিয়ে আসেন স্বচ্ছলতা। এরমধ্যে ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকে। বর্তমানে সঞ্চয় রয়েছে ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। ঋণ চলছে ১৫ হাজার টাকা। এখন ময়না বেগম সেলাইয়ের পাশাপাশি ছাগল ও হাসঁ মুরগী পালন করে থাকেন। ঘরে নিয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ ঝলমল করছে আলো, কিনেছেন আসবাবপত্রও। এ রকম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য হয়ে ভাগ্য বদল করেছেন দামথর গ্রামের নিঃস্ব অসহায় থেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন দেলোয়ারা বেগম, রওশন আরা, জমিলা খাতুন, বদিরুজ্জামানসহ দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির ৬০ সদস্য। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সহায়তায় তাদের সংসারে এখন আর কোন অভাব নেই। কাজের মাধ্যমে সংসারে সফলতা অর্জন করায় সকলের চোখে মুখে হাসি। ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় দামথর গ্রাম উন্নয়ন সমিতি। ময়না বেগম সভাপতি ও দোলোয়ারা বেগম ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্যদের উন্নতি দেখে সদস্য ভুক্তির জন্য অনেকে আবেদন করলেও একটি গ্রামে গঠিত একটি সমিতিতে ৬০ সদস্যের বেশি সদস্য থাকার নিয়ম নাই। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী রাকিব হাসান বলেন, জয়পুরহাট জেলায় ৩২ ইউনিয়নে ২৮৮টি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সমিতি ও ৩৯১ টি একটি বাড়ি একটি খামার সমিতি গঠন করা হয়েছে। উভয় সমিতির সদস্যদের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়ের পরিমান হচ্ছে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। সরকারে দেওয়া অনুদানের পরিমাণ হচ্ছে ২৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ৩৫ হাজার ১৮০ জন সদস্যের মধ্যে ঋণ বিতরণের পরিমাণ হচ্ছে ৫৮ কোটি ৭৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ঋণ আদায়ের পরিমান হচ্ছে ৩৬ কোটি ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ টি বিশেষ উদ্যোগের একটি হচ্ছে ’একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’। নিজস্ব সঞ্চয় গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার হিসাবে দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে বাংলাদেশকে।
এ প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নসহ বাঁচার পথ খোঁজে পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। একজন সদস্য ২৪০০ টাকা সঞ্চয় জমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হচ্ছে সম পরিমাণ বোনাস। ৫০০০ টাকা ঋণের বিপরীতে ৪০০ টাকা লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে এক বছরে। যা দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য অত্যন্ত সহনীয়। এতে করে দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে বর্তমার সরকারের ভিশন ও লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে দেশকে শূন্য দারিদ্রে উন্নীত করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করেন সফল নারীরা।
বাসস/সংবাদদাতা/১০৫৫/গিউ/-নূসী