বাজিস-২
ভোলা-কমিউনিটি-ক্লিনিক
ভোলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রসূতি সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২০ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রসূতিদের নিরাপদ সন্তান প্রসবের আগ্রহ বেড়েছে। ২০১৪ সালে এখানে ডেলিভারী হয়েছিলো ২২ জনের। আর গত বছর (২০১৮) এখানকার ২১৩টি ক্লিনিক থেকে নিরাপদে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ২ হাজার ৫৪৭ জন প্রসূতি। প্রতিবছর কিøনিকে মায়েদের ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রসূতি সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এতে করে অকারণে প্রসূতিদের অস্ত্রোপাচার রোধ হচ্ছে এবং তারা শারীরিক ও পারিবারিকভাবে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এখন আর পল্লী অঞ্চলে অপ-চিকিৎসায় মায়েদের জীবন দিতে হচ্ছে না।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখানে ২০১৪ সালে প্রথম ডেলিভারী সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছর ২২ জন মায়ের নিরাপদ সন্তান প্রসব হলেও পরের বছর ২০১৫ সালে তা ১২৭৪ জনে উন্নিত হয়। ২০১৬ সালে ডেলিভারীর সংখ্যা আরো বেড়ে দাড়ায় ৭৯৪ জনে। পরের বছরে ৬৬৫ জন বৃদ্ধি পেয়ে এর সংখ্যা হয় ১৪৫৯ জনে। এছাড়া ২০১৮ সালে ১ হাজারেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২ হাজার ৫৪৭ জনে।
সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বাসস’কে বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ প্রসব সেবায় বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সরকারের প্রচার প্রচারণার ফলে ডেলিভারীর ক্ষেত্রে এ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত কর্মীদের দক্ষতার সাথে ডেলিভারী কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রসূতিরা ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে দিন দিন সচেতনতাও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এ উদ্যোগের ফলে দীপাঞ্চলে কমছে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার। মায়েদের কাছে আস্থা লাভ করেছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীদের সহায়তায় নির্দিষ্ট ক্লিনিকের আওতায় প্রথমে গর্ভবতী মায়েদের তালিকা প্রনয়ণ করা হয়। তাদের ক্লিনিকে আসতে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রসূতি মায়েদের প্রসব পূর্ব সেবা, প্রসব পরবর্তি সেবা ও ডেলিভারী সেবা এ ৩ ভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রসব পূর্ব সেবার মধ্যে গর্ভের ইতিহাস জানা, শারীরিক পরীক্ষার মধ্যেমে উচ্চতা, ওজন, রক্তচাপ, রক্ত সল্পতা, প্রসাব পরীক্ষা ইত্যাদি। এছাড়া প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ জানানো, প্রসব প্রস্তুতি, ঝুকিপূর্ণ অবস্থান নির্ণয় ও বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে জানানো হয়।
আর প্রসব পরবর্তী সময়ে যাতে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়। এখানে পরীক্ষার মাধ্যমে ডেলিভারীর স্বাভাবিক অবস্থা নির্ধারণ করা হয়। ডেলিভারী স্বাভাবিক না হলে রোগীকে অন্যত্র পাঠানো হয়।
সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জনতাবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা শাহিদা বেগম বাসস’কে জানান, অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তার এখানে নিরাপদ ডেলিভারী সেবা নিশ্চিত করা হয়। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে ফোন করলে তিনি রোগীর বাড়িতে গিয়ে সন্তান প্রসব করান। গতকাল ভোর রাতে ফোন পেয়ে একই এলাকার বাহাউদ্দিনের স্ত্রী নাজমুন নাহারের বাড়িতে গিয়ে ডেলিভারী করান। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, এমনি করেই সাধারণ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। আর রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে অন্যত্র পাঠানো হয়।
প্রত্যন্ত এলাকা কন্ডকপুরের দিনমজুর নিরব হোসেনের স্ত্রী জান্নাত বেগম বাসস’কে বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিকে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। ভোরে প্রসব ব্যথা উঠলে কমিউনিটি ক্লিনিকে ফোন করলে স্বাস্থ্যকর্মী তার বাড়িতে আসেন এবং নিরাপদে সন্তান জন্মদানে সহায়তা করেন। জান্নাত আরো বলেন, যখন ব্যথা উঠলো তখন মনে হয়েছিলো আর বাঁচবেন না তিনি। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসায় জীবন বাঁচলো তার। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এ নারী।
জনতা বাজারের মৎস্যজীবী শেখ ফরিদের স্ত্রী সুরমা বেগম বাসস’কে জানান, ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। রাত ১টার দিকে প্রসব ব্যথায় ছটফট করেন তিনি। স্থানীয় ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে ফোন দিলে তিনি বাসায় আসেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকলে আমাদের মত দরিদ্রদের যে কি হতো তা ভাবা যায় না, বলেন তিনি।
জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। এখানকার দক্ষিণ সাকুচিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা নাছিমা বেগম বাসস’কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার ক্লিেিনকে ডেলিভারীর সংখ্যা বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তার এখানে ডেলিভারী হয়েছিলো ১১টি, আর রেফার হয়েছে ৫জন রোগী। ফেব্রুয়ারিতে ডেলিভারী হয়েছে ৯টি ও রেফার হয়েছে ৩টি। এছাড়া মার্চের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ডেলিভারী হয়েছে ৫টি ও অন্যত্র রেফার হয়েছে ২জন প্রসূতি।
সাকুচিয়া এলাকার দিনমজুর নাগর আলীর স্ত্রী মিষ্টি বেগম। গত বছর এ কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ সন্তান প্রসব করেন। বর্তমানে শিশু সন্তান নিয়ে ভালো আছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা চাইলেই অন্যত্র চিকিৎসার জন্য যেতে পারিনা। তাই এ ক্লিনিকই আমাদের একমাত্র ভরসা।
বাসস/এইচএএম/আহো/১১৪৫/নূসী
Home 0সকল সংবাদ বাসস বাজিস বাজিস-২ : ভোলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রসূতি সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে