বাসস দেশ-১৫ : চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারী-পুরুষকে সম-মর্যাদা দেয়া হয়

147

বাসস দেশ-১৫
নারী-সমতা
চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারী-পুরুষকে সম-মর্যাদা দেয়া হয়
॥ মাহফুজা জেসমিন ॥
ঢাকা, ৯ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : চ্যালেঞ্জিং পেশায় কর্মরত নারীরা মনে করেন, পেশাটি চ্যালেঞ্জিং হলেও সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মত অত্যন্ত সংবেদনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমমর্যাদার সাথে কাজ করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে মুঠোফোনে কথা হয় বরিশাল জেলায় কর্মরত র‌্যাব-৮ এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলামের সাথে। বাসসকে দেয়া এ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে এই পেশায় আছি। আমার কখনো মনে হয়নি যে, নারী হিসেবে আমাকে কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বা আমার প্রতি কোন বৈষম্য করা হচ্ছে।
আতিকা ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে কাজ করা সবার জন্যই চ্যালেঞ্জিং। এখানে নিজেকে নারী মনে করে পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু, এটি একটি টিম ওয়ার্ক, তাই সবার সাথে সমানভাবে পরিশ্রম করতে হয়। এখানে সবাই সমান। সমান পরিশ্রম। সমান চিন্তা। সমান মর্যাদা। সিদ্ধান্ত গ্রহণেও নারী-পুরুষ সমান।’
একজন নারী হিসেবে পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই শতভাগ সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান আতিকা ইসলাম। তিনি ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষানবিশকাল শেষ করে ২০০১ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)তে সহকারি পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৭ জন। যা বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের শতকরা ৬ দশমিক ৯৬৫ ভাগ বা প্রায় ৭ শতাংশ। এখানে কর্মরত নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত প্রায় ১:১৩।
বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ১ম শ্রেণীর নারী পুলিশ কর্মকর্তা আছেন মোট ২৭৪ জন। তাদের মধ্যে এডিশনাল আইজিপি ১ জন, এডিশনাল ডিআইজি ৪জন, পুলিশ সুপার ৭২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০১জন এবং সহকারি পুলিশ সুপার আছেন ৯৬ জন। ১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে উচ্চ পর্যায়ে বিসিএস) নারী নিয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে (বিসিএসএ) কর্মরত নারীর সংখ্যা মোট বিসিএস কর্মকর্তার দশ শতাংশের বেশী। এতে নারী ও পুরুষের সংখ্যার অনুপাত ১:১০।
এবছরের শুরুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মতো লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন নারী সেনা কর্মকর্তারা। তাদের একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারাহ আমির। তিনি বর্তমানে ট্যাকটিকস উইং, স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সিলেট)-এ কর্মরত আছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারাহ আমির বলেন, সেনাবাহিনীতে যারা কাজ করতে আসেন তাদের জন্য অবশ্যই এটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই চ্যালেঞ্জ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান। এখানে মেয়েদের জন্য আলাদা কোন চ্যালেঞ্জ নেই। মেয়েরা নিজেদের নিষ্ঠা এবং আত্মমর্যাদার ব্যাপারে সবসময় যতœশীল। এসব গুণাবলী থেকেই তারা নিজেদের যোগ্যতায় নিজেদের পথ করে নেয়।
তিনি বলেন, এই পদে আসার জন্য আমাদের নারী হিসেবে আলাদা করে দেখা হয়নি। অফিসার হিসেবে আমাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা বিবেচনা করে আমাদের পদোন্নতি হয়েছে।
সারাহ্ আমির ২০০১ সালের ৪ জুলাই ৪৮ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ৪৮ তম ব্যাচে ৩০ জন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাদের মধ্যে যে ২১ জন ২০০৩ সালের ২ জুলাই কমিশন পান তাদের মধ্যে সারাহ আমির একজন।
আন্ত:বাহিনী সেনা পরিদপ্তর-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে সর্বপ্রথম সেনা ক্যাডেট হিসেবে নারীরা যোগদান করেন এবং ২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে স্বাধীনতার পর থেকে নারীরা সেনা চিকিৎসা শাখায় চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিতে পারতেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বর্তমানে মেজর জেনারেল পদে কর্মরত আছেন ১ জন নারী। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে ডা. সুশানা গীতি দেশে প্রথম নারী মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান।
এবছরই প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর ফাইটিং ফোর্সে নারীরা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পান। বর্তমানে দেশে পাঁচজন নারী লেফটেন্যান্ট কর্ণেল হিসেবে কর্মরত আছেন। সেনা পরিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা আনুমানিক ৯০০ জন। মেডিকেল কোর ছাড়া নিয়মিত কমিশনে নারী অফিসার আছেন প্রায় ৪০০ জন। নারী সৈনিক আছেন প্রায় ২০০০ জন। এছাড়াও জাতিসংঘ মিশনে অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ জন।
বাসস/বিপ্র/এমজে/১৮২০/আরজি