চাঁদপুরে চলতি মাসেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে

593

চাঁদপুর, ৯ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন চলতি মাসেই সম্পন্ন হচ্ছে। জেলায় বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৭ লাখ ৫ হাজার ৮ শত, তার বিপরীতে ৮ হাজার ৮২২ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চরাঞ্চল ব্যতীত চাঁদপুরের ৯৯% ভাগ এলাকাই এখন বিদ্যুতায়িত।২০১৮- ২০১৯ অর্থ বছরে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা, ৭ পৌরসভা ও ৮৯ টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৬৫টি গ্রামের মধ্যে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (হাজীগঞ্জ)-১ এর অধীনে এরইমধ্যে হাজীগঞ্জ ও শাহারাস্তি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এ পিবিএসে কেবলমাত্র কচুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আংশিক কিছু গ্রাহক বিদ্যুতায়নের আওতায় আসতে পারেননি। তারা এই মাসেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে।
বর্তমানে এ পিবিএসে বিদ্যুতায়িত গ্রামের সংখ্যা ৫৬৮টি। যার আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩০৫ জন, বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ২১ হাজার ৬৩৪ জন এবং সেচ, শিল্প ও সিআই গ্রাহক রয়েছে ৩ হাজার ৬৪২ জন।
এ ছাড়াও সড়কবাতি রয়েছে ২৬৭ টি। যার বিদ্যুতায়ন হার এখন ৯৯ %। বিদ্যুতায়িত লাইন হচ্ছে ৩ হাজার ৫৮৯ .৮৮০ কি.মি.।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় চাঁদপুর সদর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। কেবলমাত্র মতলব উত্তরের প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলে আংশিক বাকি রয়েছে। চলতি মাসে এ এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে।
চাঁদপুর সদরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় বিদ্যুতায়িত গ্রামের সংখ্যা ৭৪৫ টি। যার আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮২ জন, বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ২৬ হাজার ৬৬৭ জন এবং সেচ, শিল্প ও বৃহৎ শিল্প দাতব্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক রয়েছে ৬ হাজার ৮০৪ টি।
এর ৯৫% জন গ্রাহকই প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী। এ ছাড়াও সড়কবাতি রয়েছে পর্যাপ্ত। যার বিদ্যুতায়ন হার এখন শতভাগ। এ পিবিএসের প্রধান গ্রাহক চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনাধনাগোদা সেচ প্রকল্প। বিদ্যুতায়িত লাইন হচ্ছে ৩০৫ কি.মি.।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে কচুয়া, চাঁদপুর সদর- ২ মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর পৌরসভার তরপুরচন্ডি, বালিয়া, বাগাদি প্রভৃতি ইউনিয়নের আংশিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই চাঁদপুর জেলা শতভাগের অন্তর্ভূক্ত হবে ।
চাঁদপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের সাব স্টেশনগুলো এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলছে। লোডশেডিং এখন শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ’এ স্লোগানকে সফল করতে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর সদর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুর ব্যাপক সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। নিরলসভাবে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ স্লোগানকে সফল করার বিষয়টি জানতে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ( হাজীগঞ্জ) এর সহকারী প্রকৌশলী সুকুমার চৌধুরী জানান , ‘কচুয়ার আংশিক কয়েকটি গ্রামে লাইন টানানো হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় নি। মার্চের মধ্যেই সংযোগ দেবার বিষয়টি নিশ্চিত করে শতভাগে এ উপজেলাকে আনা হবে। এখানে এখন লোডশেডিং নেই। তবে লাইন সচল রাখতে গাছ কাটা, ট্রান্সফরমার বা লাইন রি-পেয়ারিং এর জন্যে কোনো কোনো সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ‘ আলোর ফেরিওয়ালা ’ নামক একটি সেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যা তাৎক্ষণিকভাবে নির্দিষ্ট অংকের জামানত ও মিটার খরচ বাবৎ অর্থ ব্যাংক রশিদে গ্রহণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে থাকে। ’ এ ছাড়াও জুনের মধ্যে ১৫ হাজার পুরাতন খুঁটি পরিবর্তন করে নতুন খুঁটি বসানো এবং পুরাতন লাইন পাল্টানো এবং রামপুর, সেন্দ্রা,মকিমাবাদ, আয়নাতলী ও রঘুনাথপুর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্যে উপ-স্টেশন স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
চাঁদপুর সদরে অবস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর এজিএম সিয়াম সিরাজী জানান , ‘ গ্রাহকের সেবার মান বাড়াতে বর্তমানে যে কোনো একজন গ্রাহক অন-লাইনে আবেদন করতে পারেন। ফলে আবাসিক একজন গ্রাহক ৭ দিনে এবং শিল্পের জন্যে একজন গ্রাহককে ২৮ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়।
চাঁদপুর সদরের আওতায় ইতোমধ্যেই চাঁদপুর সদর, হাইমচর মতলব দক্ষিণ উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জের বাকি আংশিক এলাকায় মার্চের মধ্যেই বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে।’
তিনি জানান,‘ বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলো সংস্কার করে লোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হবে। আবাসিকভাবে কোনো গ্রাহকের ঘর ওয়েরিং করা থাকলে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচির আওতায় ৪৬৫ টাকা পরিশোধে তাৎক্ষণিকভাবে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার ব্যবস্থা রেখেছে।’
চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো.সাহাদাৎ হোসেন জানান,‘ চাঁদপুর পিডিবি’র অধীন এলাকাগুলোতে ২০১৮ সালেই শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরে আমরা খুশি। আপনারা অবশ্যই জানেন অতীতের চেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তবুও চাঁদপুরে এখন লোডশেডিং নেই। এসব করতে প্রধানমন্ত্রীরও অবদান রয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন,‘ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। চাঁদপুরে ৯৫ % গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। সেবার মান বাড়াতে আরো দু’টো সাব-স্টেশন করা হচ্ছে। এর একটি পুরানবাজারে অপরটি ওয়্যারল্যাস বাজারে। পুরাতন লাইনকে সংস্কার করা হচ্ছে। আরো নতুন ট্রান্সফরমার বসানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বড় দু’টো সেচ প্রকল্প চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প চাঁদপুর পিডিবি সফলভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে আসছে। অতীতের চেয়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা অনেক উন্নত।