জাদুর পরশে নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী

665

সংসদ ভবন, ৬ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কোন জাদুর পরশে নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে। এই বদলে যাওয়া এখন কবিতায় কুঁড়ে ঘর আছে বাস্তবে নেই। দেশে কোন মানুষ আর না খেয়ে থাকে না।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর এ আলোচনা শুরু হয়। ওই দিন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ. স. ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম ও বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ২২তম দিনে তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সরকারি দলের আবুল কালাম আজাদ, রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খান, আসাদুজ্জামান নূর, মজাহারুল হক প্রধান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মো. মহিববুর রহমান, শেখ তন্ময়, নার্গিস রহমান, শবনম জাহান, ফেরদোসৗ ইসলাম, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও রানা মোহাম্মদ সোহেল আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ আজকে যে উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে তিনি তাঁর ভাষণে এ বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আশপাশের দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। জিডিপিতে গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান হচ্ছে এখন বিশ্বে ৪৩তম এবং ডিপিপিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান বিশ্বে ৩১তম। এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় গতবছরের জুন মাসে প্রাক্কলিত ১৭৫২ ডলার, যা ইতোমধ্যেই ১৮০০ ডলার অতিক্রম করেছে। সেখানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় হচ্ছে ১৬৪০ ডলার।
বিএনপি-জামায়াতের আস্ফালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি ইউএস কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেখানে বলেছে জামায়াতে ইসলামী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠনের সাথে সবাইকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। একই সাথে বিএনপিকে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে কানাডার আদালত বলেছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিচার অনুযায়ী এই দুটি সংগঠন সন্ত্রাসী সংগঠন। যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেখানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আইনজ্ঞ তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। কয়েকদিন আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের আগে ক্ষমতা জনগণের কাছে ছিল। ৩০ ডিসেম্বরের পর এই ক্ষমতা ছিনতাই হয়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। পরেও তিনিই প্রধানমন্ত্রী তাহলে আগে যদি থেকে থাকে, তাহলে পরেও জনগণের হাতেই ক্ষমতা রয়েছে। বরং ক্ষমতা তারা ছিনতাই করতে চেয়েছিল, জনগণ তাদের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সরকারের অভূতপূর্ব সফলতার চিত্র অংকন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি চমকপ্রদ, অনুকরণীয় বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতি দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিভীষিকাময় অবস্থায় বাংলাদেশে এসে মানুষের দুঃখ, কষ্টকে উপলব্দি করে এদেশের জাতির পিতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমে ক্ষমতা গ্রহণের পর এদেশের বুভুক্ষ মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ যোগাযোগ ও অবকাঠোমো উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ায় ওই সময় দেশের অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ২০০১ সালে এদেশের উন্নয়নকে প্রতিহত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর দেশ আবারো পেছনের দিকে যেতে থাকে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অভাব বুঝতে পেরে আবারো ২০০৮ সালে ভোট দিয়ে সরকার গঠনে ম্যান্ডেট দেয়। ওই সময় থেকে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়।
উন্নয়নের পথ-নকশা তৈরি করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গ্রামেগঞ্জে যেখানে পায়ে হাটার রাস্তা ছিল না, সেখানে এখন পাকা রাস্তা করা হয়েছে। গ্রামের অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ঘোষণা করেছেন। শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রামেও পৌঁছে দেয়া হবে। এটা বাস্তবায়ন হলে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াসহ সেখানের মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ জাতির জনকের কন্যার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন এবং এর সুফল আজ ভোগ করছেন। একটি প্রতিক্রিয়াশীল অংশ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে, এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের চক্রান্তকে প্রতিহত করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।
সরকারি দলের সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে ওই অঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি বলে সরকার গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করেছে। হ্যাঁ আমরা সেই গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করেছি, যেই গণতন্ত্র মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, যেই গণতন্ত্র স্কুল কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ধ্বংস করে সেই গণতন্ত্রকে আমরা ধ্বংস করেছি। নৈরাজ্যের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।
সরকারি দলের অন্য সদস্যরা বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সরকারের বিগত সময়ের ৩৫টি খাতের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিষয়ে বিবরণ দিয়েছেন এবং সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মকান্ডের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক ও কর্মসংস্থান উল্লেখ করে তারা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে দেশের উন্নয়নে এরা ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে।
তারা বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কাজ করে যাচ্ছেন। অশুভ শক্তি যাতে তথ্য প্রযুক্তি খাতকে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত সময়ে উন্নয়নের কারণে ভোট দিয়েছে।
জাসদের সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে যারা সন্দেহ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, তারা নতুন কোন ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে। এটা তাদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অনিয়ম আবিস্কারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের গণশুনানি গণঘুমে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জঙ্গি দমনের যুদ্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিয়ত তর্জন-গর্জন, ফাঁকাবুলি হুমকি-ধামকির মধ্যে নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
হাসানুল হক ইনু বলেন, মাছের আড়ৎয়ের মতো নির্বাচন বাণিজ্যের মাঝে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে যায়নি, এতে নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা শেখ হাসিনার বিকল্প কাউকে নির্বাচনী মাঠে দাঁড় করাতে পারেনি। জামায়াত-রাজাকারদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করার ফলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে।