রাঙ্গামাটির আনন্দ মনি চাকমা বিলাতি ধনিয়া চাষ করে স্বাবলম্বী

920

রাঙ্গামাটি ৫ জুন ২০১৮(বাসস) : বিলাতি ধনিয়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন রাঙ্গামাটির ঘাঘড়া নিবাসী আনন্দ মনি চাকমা। এক একর জমিতে আনন্দ মনি চাকমা ধনিয়ার চাষ করেন। তার চাষ কৃত ধনিয়া অনেক ভালো হয়েছে। এ মৌসুমে ধনিয়া বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়েও প্রায় ৭০ হাজার টাকা মুনাফা থাকবে বলে আনন্দ মনি চাকমা আশাবাদী। এ জন্য আনন্দ মনি চাকমার আনন্দ যেন ধরেনা। ধনিয়ার খেত দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি। ভবিষ্যতে আরো বেশি পরিমান জমিতে বিলাতি ধনিয়ার চাষ করবেন বলেও তিনি জানান।
কাপ্তাই-রাঙ্গামাটি সড়কের পাশে ঘাঘড়া এলাকার মহাজন পাড়ায় আনন্দ মনি চাকমা বিলাতি ধনিয়ার চাষের জমি। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে বিশাল ক্ষেত জুড়ে সবুজ রঙের বিলাতি ধনিয়ার সমাহার। তাজা ধনিয়ার হালকা মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে। আনন্দ মনি চাকমা এ প্রতিনিধিকে তার বাগান ঘুরিয়ে দেখান। তিনি বলেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রাইখালীর সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে এ বিলাতি ধনিয়ার চাষ করা হয়।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন একাধিকবার তার বিলাতি ধনিয়ার জমি পরিদর্শন করেছেন। কিভাবে এবং কোন মাটিতে বিলাতি ধনিয়ার চাষ করা হবে, কিভাবে ধনিয়ার পরিচর্যা করতে হবে, পোকা মাকড়ের কবল থেকে কিভাবে ধনিয়াকে রক্ষা করা যাবে এসব বিষয়ে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন ছাড়াও কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মোঃ কামাল উদ্দিন দিক নির্দেশনা ও নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের নির্দেশনা মেনে চাষ করায় ফসল অনেক ভালো হয়েছে বলেও আনন্দ মনি চাকমা জানান।
বিলাতি ধনিয়া চাষ করতে আনন্দ মনি চাকমার আনুমানিক চল্লি¬শ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমান বাজার মূল্যে বিলাতি ধনিয়ার কেজি প্রায় ৮০ টাকা। সেই হিসেবে ধনিয়া বিক্রি করে তার প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৭০ হাজার টাকা মুনাফা থাকবে বলে আনন্দ মনি চাকমা আশা করছেন। এখন থেকেই অনেক ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা তার কাছ থেকে বিলাতি ধনিয়া কিনে নেবার জর‌্য আগ্রাহ দেখাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। আনন্দ মনি চাকমা বিলাতি ধনিয়ার চাষ করে আনন্দিত ও খুশি বলেও জানান।
এ ব্যাপারে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলতাফ হোসেন জানান, বিলাতি ধনিয়া অত্যন্ত লাভজনক একটি মসলা জাতীয় ফসল। যে কেউ এ ধনিয়ার চাষ করতে পারবেন। আগ্রহী চাষিদের পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও তিনি জানান। ড. আলতাফ বলেন, বিলাতি ধনিয়া অন্যতম অর্থকরি ফসল। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ওয়াগ্গা, বেতবুনিয়া, কাউখালী, ঘাগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিলাতি ধনিয়ার চাষ হয়। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি (অগ্রহায়ন-পৌষ) মাস বিলাতি ধনিয়ার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বিলাতি ধনিয়া পাতাজাতীয় ফসল হওয়ায় এর জন্য ইউরিয়া ও পটাশ জাতীয় সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিলাতি ধনিয়ার পাতা, চওড়া ও মসৃন হওয়ায় জমিতে ছাউনি দেওয়া জরুরি। অন্যথায় প্রখর রোদে বিলাতি ধনিয়ার পাতা শক্তও কাঁটাযুক্ত হয়ে যাবে। বিলাতি ধনিয়ার জমিতে সবসময় রস থাকতে হবে কিন্তু জমিতে পানি জমতে পারবেনা। জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। বিলাতি ধনিয়ায় সাধারণত রোগবালাই হয়না। তবে জমিতে পানি জমলে ক্ষতি হতে পারে। ফসল তোলার সময় ধনিয়ার গোড়াসহ মাটি থেকে তুলে ফেলতে হয়। বিলাতি ধনিয়ার বীজ বপন ও সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত উন্নত পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। বিলাতি ধনিয়া চাষে লোকসান হবার কোন আশংকা নাই। যে কারণে এ চাষে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।