আখের রসের চাহিদা মেটাতে মেহেরপুরে আখচাষ বাড়ছে

486

মেহেরপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার আখ চাষীরা আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এক বছরের ব্যবধানে অন্তত সাড়ে ৪০০ একর জমিতে আখের আবাদ বেড়েছে। মূলত পানীয় হিসেবে আখের রসের চাহিদা বেড়ে যাওয়া প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করছেন চাষীরা। ৮০’র দশকে মেহেরপুর জেলাতে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে আখের চাষ হতো।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, একসময় মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ব্যাপক আখ চাষ হতো। কিন্তু বিভিন্ন চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়া, চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করা এবং বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আখের দাম না বাড়ার কারণে কৃষকরা আখ চাষ ছেড়ে দিতে থাকেন। আখের স্থান দখল করে বিভিন্ন লাভজনক ফসল। কিন্তু দু’বছর ধরে আবার আখ চাষ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর জেলায় ৯৬৭ একর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। গত বছর ছিল মাত্র ৫০০ একর। অবশ্য এর মধ্যে বেশির ভাগই গাংনীতে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী ইক্ষু উন্নয়ন ও ইক্ষুু ক্রয়কেন্দ্র (সাবজোন অফিসের) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত হাবিবুর রহমান জানান, গাংনী উপজেলার ৬টি ইক্ষু উন্নয়ন কেন্দ্র ও ১০টি ইউনিটের মাধ্যমে তারা আখ ক্রয় করেন। বিভিন্ন এলাকার চাষীদের ভর্তুকিও দেয়া হয়।
মেহেরপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য গ্রন্থের লেখক প্রবীন সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম জানান, মিল জোনের আওতায় না হয়েও ৮০‘র দশকেও মেহেরপুর জেলাতে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে আখের চাষ হতো। অর্থকরী ফসল হিসেবে এসব আখ থেকে গুড় উৎপাদন করে চাষীরা লাভবান হতো। সবজি চাষে গুড় উৎপাদনের চেয়ে লাভবান হওয়ার কারণে কালক্রমে আখচাষ কমে গেছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আখের সরকারি নির্ধারিত দাম বাড়ানো হয়েছে, এখন চিনিকলের ক্রয়কেন্দ্র হাতের নাগালে, এক সপ্তাহ পরই মোবাইলের মাধ্যমে চলে আসে টাকা। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শহরের অলিগলিতে আখের রস বিক্রি হচ্ছে। সেখানে প্রতিদিনই প্রচুর আখের প্রয়োজন হয়। এসব কারণেই কৃষকরা ফের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দি গ্রামের আব্দুল বারি জানান, তার বাপ-দাদারা একসময় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে আখ চাষ করতেন। কিন্তু লোকসান হওয়ায় ২০১৩ সালে আবাদ একেবারে বন্ধ করে দেন। ২০১৭ সালে এসে সরকার আখের দাম মণপ্রতি ১২০ টাকা ও পরের বছর ১৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলে আবার আখ চাষ শুরু করেছেন চাষীরা। যদিও বাজার বিবেচনায় আখের দাম ২০০ টাকা মণ নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান (আতু)।
মেহেরপুর সদর উপজেলায় সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে না থাকলেও ভালো দামে আখ বিক্রি করতে পারছেন বলে জানান, বারাদির আখচাষি হামিদুল ইসলাম। তিনি জানান, বিঘাপ্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ করে একবার আখ রোপণ করলে তিন বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ২০০ টাকা মণ দরে রস বিক্রেতারা তার জমি থেকে আখ কিনে নিয়ে যান।