আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

737

সংসদ ভবন, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়ার ফলে এখন অনেকের মাঝে এই উপলদ্ধি এসেছে যে, এই মাদক বিক্রি বা পরিবহন করা একটা অপরাধ। এ সম্পর্কে জনগণ যথেষ্ট সচেতন হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আত্মসমর্পণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদের আমরা চিকিৎসা এবং কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করছি। তাদের পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা আজ তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, সমাজ মাদকমুক্ত করার জন্য একটি বাস্তবমুখী পরিকল্পনার আওতায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও দমন অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হচ্ছে।
সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। পুলিশের চলমান অভিযান এ লক্ষ্যে অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে মাদক বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে সমাজকে মাদকমুক্ত করতে তাঁর সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি সংসদ সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় মাদকাসক্তি নিরাময় এবং মাদকের বিস্তার রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিজেদেরও উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান।
সরকারি দলের সদস্য মাহফুজুর রহমানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মাদক নিয়ন্ত্রণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সরকার মাদক বিরোধী আইনে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জনকে আসামী করা হয়।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস এবং মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদক বিরোধী প্রচার অভিযানে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬টি লিফলেট, ১ লাখ ৮২ হাজার ১৪৮টি স্টিকার, ১০ লাখ ১৭ হাজার ১৭১টি পোস্টার, ১ লাখ ২ হাজার ১১৮টি মাদক বিরোধী বুলেটিন প্রকাশ ও ৬৪ হাজার ৪৩৬টি মাদক বিরোধী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৪ থেকে বৃদ্ধি করে ২৭৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কার্র্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই মহিলা মাদকাসক্তদের জন্য ওই কেন্দ্রে ২৪ শয্যার একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় তিনটি বিভাগীয় শহরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা ২শ’টিতে উন্নীত করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রতিটিতে ২৫ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় অবস্থিত সকল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা কার্যালয় এবং উপজেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যুব প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সচেতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্রীড়া চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সমাজের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। যুব সমাজকে নেশা ও মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত রেখে সুস্থ সবল যুব সমাজ গড়ে তুলতে ক্রীড়া বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই সরকার এই উদ্দেশ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া পরিদপ্তরের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ দ্রুত এবং যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে যানবাহন এবং মাদক স্পটে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে সভা, সমাবেশ, র‌্যালি, প্রচারপত্র বিতরণের মাধমে মাদক বিরোধী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমিউনিটি পুলিশিং,কল্যাণ সভা এবং ওপেন হাউজ ডে’র মাধমে মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মিত মামলার পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচলনা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা, কক্সবাজার জেলার টেকনাফে মাদক বিরোধী বিশেষ জোন স্থাপনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে, চারটি বিভাগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। মাদক নির্মূলে বিশেষায়িত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি প্রশিক্ষণ একাডেমী নির্মাণ করা হবে। সরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৭টি বিভাগীয় শহরে ২শ’ শয্যার একটি করে নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ে অফিস নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৭টি জেলায় জেলা অফিস নির্মাণ করা হবে। বৃহত্তর জেলা শহর মাদক প্রবণ জেলাগুলোতে ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। অবশিষ্ট জেলাসমূহে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রসমূহেও সরকারি অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।