গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

232

সংসদ ভবন, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য মো. মুজিবুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দুর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লব, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য হলো সকল গ্রামে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল। এ সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ মানেই ছিল বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, কঙ্কালসার মানুষের দেশ। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ১২ জুনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পায়, জনগণের সরকার পায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১। এ ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ। আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে।
তিনি বলেন, এ সময় সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করে এবং খাদ্য উৎপাদন স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দুস্থ, অসহায় মানুষের দুস্থভাতা, স্বামী-পরিত্যক্তা ও বিধবা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পসহ নানা কর্মসূচি চালু করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার পিছনে নিয়ে যায়। ২০০১ পরবর্তী ৫ বছর ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এক বিভীষিকাময় সময়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে গত বছর ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমাত্রিক তৎপরতা রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা, সম্প্রসারণ, কৃষি ও অকৃষি খাতে দক্ষ জনবল বাড়াতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ, গ্রামাঞ্চলে আর্থিক সেবা খাতের পরিধি বিস্তার, কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি গ্রামোন্নয়ন প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করেছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি গ্রামীণ অর্থনীতির এই বিকাশ প্রক্রিয়ায় সহায়ক হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকান্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি অকৃষি খাত, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে।