গণতন্ত্রের সঙ্গে চকবাজারের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই : ড. হাছান

370

চট্টগ্রাম, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে ঢাকার চকবাজারের ভয়াবাহ অগ্নিকান্ডের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র নেই বিধায় চকবাজারে আগুন লেগেছে, ফখরুল সাহেবের এসব বক্তব্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজী পুকুর পাড় লেনের নিজের বাসভবনে কবি আবদুর রউফ এর কাব্যগ্রন্থ ‘দৃষ্টির গোপন গহীনে’ ও কবি মনজিল মুরাদ লাভলু’র কাব্যগ্রন্থ ‘ভাঁজ ভাঙ্গা ঘ্রাণ’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
‘দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন লেগেছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব সম্পর্কে আমার ধারণা অনেক উচুঁ ছিল। কিন্তু ইদানিং তিনি অবান্তর কথা বলছেন। গণতন্ত্র নাই বিধায় চকবাজারে আগুন লেগেছে এটি কী রকম দায়িত্ব-জ্ঞানহীন কথা, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে মির্জা ফখরুল প্রকারান্তরে অগ্নিকান্ডর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে তাই জানালেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র নাই দাবী করে মানুষের উপর পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ করে পাঁচশ’র বেশী মানুষকে হত্যা করেছে। সাড়ে তিন হাজার মানুষকে আগুনে ঝলসে দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে। সে সময় পেট্টোল বোমা মেরে মানুষকে যেভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ঠিক একইভাবে চকবাজারের অগ্নিকান্ডের সঙ্গে কোন যোগসুত্র আছে কিনা মির্জা ফখরুলের বক্তব্য একই ধরণের নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চকবাজারের আগুনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক আমি জানিনা। তবে এই কথার মাধ্যমে এটিই ব্যাখ্যা দেয়া যায়, পেট্টোল বোমার ঘটনা গুলোর মতো চকবাজারের আগুনের ঘটনার সঙ্গেও তাদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
অবান্তর কথা না বলে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিতে মির্জা ফখরুলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে ৪২ জন জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় সেখানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কয়েক মাস পর নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত বিরোধী দল বলেছে, আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেটার সঙ্গে আমরা আছি, থাকবো।’
তিনি বলেন, ‘চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পুরো দেশ আজ শোকাহত, মানুষ শোকার্ত। মানুষ কিছু করতে না পারলেও নিহত-আহতদের জন্য অন্তত প্রার্থনা করছে। এই সময়ে একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে তাদের উচিত ছিল, জাতীয় ঐক্য প্রদর্শন করা। সেটি না করে যে কোনো ঘটনার মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসা সমুচিত নয়। এ ধরনের কথা বলে তারা বরং তাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।’
কর্ণফুলী টানেলের খনন কাজের উদ্বোধন এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে আগামীকাল রোববার চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সেটির ধারাবাহিকতায় গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম বদলে গেছে, দেশ বদলে গেছে। আকাশ থেকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার যখন মানুষ দেখে, ভুল হয়, এটি কী চট্টগ্রাম শহর, নাকি ব্যাংকক। চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যে ভালোবাসা, মমত্ব এটির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে রোববারের সফর।’
একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদারের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক ড. আনোয়ারা আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সেকান্দার চৌধুরী, বলাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী লেখক ও গবেষক জামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাব্যগ্রন্থ দুটির লেখকদের সাফল্য তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কবিতা মনের ভাব প্রকাশ করার একটি মাধ্যম। কবিতা মনের কথা বলে, সমাজের কথা বলে। কবিতা মানুষকে পরিশীলিত হবার শিক্ষা দেয়, প্রতিবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করে। দেশাত্ববোধ সৃষ্টি ও সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে কবিতা। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই সময়ে কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ কমে আসছে। একসময় লাইব্রেরিতে গিয়ে মানুষের পড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল। কিন্তু স্মার্টফোন সেই অভ্যাস কেড়ে নিয়েছে। বিল গেটস তার সন্তানদের বয়স ১৬ বছর হওয়ার আগে স্মার্টফোন দেননি। এই ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও কাগজে ছোটদের পাতা থাকতো। শিক্ষার্থীরা কবিতা লিখতো। সে কবিতা ছাপা হলে দেখতাম তাদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস। সেটি এখন আর নেই। কাগজে এখন ছোটদের পাতা তেমন থাকে না, কবিতাও লেখা হয় না।