বাসস দেশ-২৩ : বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি

283

বাসস দেশ-২৩
মাতৃভাষা দিবস-পালিত
বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে জাতি
ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন এবং অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবির মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে বাঙালির শোক আর অহংকারের এই মিনার।
রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ বাজানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাঁকে স্বাগত জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, তথ্যমন্ত্রী এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আইন সম্পাদক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকশিনারবৃন্দ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এর আগে বুধবার মধ্য রাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন।
এসময় হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিÑআমি কি ভুলিতে পারি’- গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। একই সাথে তারা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের এবং অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবি জানান।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল, শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গণতন্ত্রী পার্টি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সকালে দলের পক্ষ থেকে প্রভাতফেরী সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অনেক বিদেশী নাগরিককে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ ছিল সরকারী ছুটির দিন।
‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রভাতফেরি সহকারে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবীতে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, জারি হয় ১৪৪ ধারা, ভেঙে ফেলা হয় শোষকের শৃঙ্খল। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে বিদীর্ণ হয় বুক। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সব কটি মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।
এদিকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ সকালে আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন আজিমপুর কবরস্থান মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হাফিজুল ইসলাম।
এছাড়াও এদিন সকাল সাড়ে নয়টায় ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিলাদ ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীর স্কুল-কলেজ ও পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সবাই। এই শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বেঁচে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। এসব আয়োজনে শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
বাসস/এএসজি/এমএএস/১৮২৫/কেকে