‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’- একুশের দিনে ভিন্নরূপে গ্রন্থমেলা

318

ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস ) : শোকাবহ গৌরবান্¦িত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। প্রতি বছরের মতো এবারও অমর একুশে গ্রন্থমেলা আলতাব মাহমুদের সুরে আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত কালজয়ী মমস্পর্শি চেতনাদ্দীপক বেদনাবিধূর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংগীতের মুর্ছনা চেতনায় জাগিয়ে তুলল বাঙালির মাতৃভাষা রক্ষায় রক্ত¯œাত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিময় এই দিনটিকে।
আজ সকাল সাতটায় অমর একুশের এই দিনের শুরুতে একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে ভাবগম্ভীর ঘোষণা শোনা গেল, ‘আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, ‘ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ ১৯৫২ সালের এই দিনের সকল শহীদদের প্রতি বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সকল শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। সবাইকে আজকের গ্রন্থমেলা এবং একাডেমির সব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে।’
তবে,তার আগেই প্রকাশক ও বিভিন্ন স্টলের কর্মচারী এবং বিপূলসংখ্যক দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশের জন্য গেটগুলোর সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গেট খোলার পর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ মেলাঙ্গণে প্রবেশ করতে থাকেন।
সাড়ে সাতটার দিকে বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরে স্থাপিত মূলমঞ্চে শুরু হয় একুশের কবিতা পাঠের আসর। আসরের সভাপতি কবি অসীম সাহা শুরুতে ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, পৃথিবীতে বাঙালি জাতিই একমাত্র উচ্চারণ করতে পারেন, তারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার আদায় করেছেন। আর এই অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাংলাভাষা পরাধীনই থাকতো। স্বাধীনতার মধ্যদিয়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষারূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টে ঘাতকদের হাতে নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বরাবরের মতো আজ একাডেমির এই মঞ্চে দুপুর একটা পর্যন্ত শতাধিক নবীন, তরুন ও প্রতিষ্ঠিত কবিরা কবিতা পাঠ করেন। কবিতায় ভাষায় উচ্চারিত হয় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন, শহীদদের কথা, স্বাধীনতা সংগ্রাম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রসঙ্গ। শুধু রাজধানী থেকেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অসংখ্য কবিরা এসে কবিতা পাঠে অংশ নেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী নিজে এই আসরে নতুনদের সাথে কবিতা পাঠ করেন। কবিতা পাঠের পর তিনি এই আসরটি সম্পর্কে বাসসকে জানান, এতে অংশগ্রহণ করা কবিরা বেশিরভাগই নতুন লিখেন। আমি তাদের আবেগে একাত্ম। তাদের কবিতার আকাংখার মূল্যায়নে তাদের সাথে আজ কবিতা পাঠে সামিল হোলাম।
আজ একুশের দিনে শুরু থেকেই দোয়েল চত্বর থেকে টিএসএসটি পর্যন্ত সড়কটিতে ছিল বিপূলসংখ্যক লোকের ভিঁড়। বেলা যত বাড়ছিল, দর্শনার্থীর সংখ্যা ও ততোই বাড়তে থাকে। শিশু-কিশোর, বয়স্ক, তরুণ-নারী পুরুষ মেলায় ¯্রােতের মতো প্রবেশ করছিল। দশটার পর থেকে মেলা। স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোর মাঝখানে খোলা জায়গায় একটু দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না। স্টলের সামনে শত শত মানুষ ভীঁড় করে পছন্দের বই খোঁজায় । স্টল সামাল দিতে হিশশিম খাচ্ছিল বিক্রেতারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক গ্লাসটাওয়ার দেখার জন্য টাওয়ারের পাশে পুকুর পাড়ে অগণিত নারী-পুরুষের ভিঁড় লেগে যায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে তারা সেখানে এসে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে প্রবেশ করছিল মেলায়।
অমর একুশের শোকাবহতায় আজ আরেক শোকের যোগ হয় । গতরাতে চকবাজারের অগ্রিকান্ডে প্রাণহানির ঘটনাটি মেলায় আসা মানুষের মুখে মুখে দুঃখের সঙ্গে উচ্চারিত হতে শোনা যায়।
আজ বই বিক্রিও হচ্ছে বিপুল। বিভিন্ন স্টলে বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে অঙ্কুর প্রকাশনা সংস্থার স্বত্তাধিকারী মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বাসসকে বলেন , লাখো জনতা বইয়ের চেহারা দেখছেন, নাম পড়ছেন, লেখকের নাম দেখছেন , অনেকে পাতা উল্টিয়ে দেখছেন বইটা কি, কবিতার না উপন্যাস, না প্রবন্ধের। কিনুক বা নাই কিনুক, তারা বই কেনার প্রতি উৎসাহ দেখায়। মহান একুেশ ফেব্রুয়রি এভাবেই বাঙালিকে প্রেরণার উৎস্য হয়ে আসছে।