অনলাইনে হাসিনের নারী উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

489

॥ মাহবুব আলম ॥
ঢাকা, ১০ মার্চ, ২০১৮ (বাসস) : শৈশব থেকেই মনস্থির করেছিলেন, চাকরি করবেন না, চাকরি দেবেন। বড় হয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো তরুণ নারী উদ্যোক্তা প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের মেয়ে ফারজানা হাসিনের। অদম্য সাহস ও ইচ্ছা দুটোই তাকে এ সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।
২০০৮ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসিতে স্নাতকোত্তর করেন ফারজানা হাসিন। লেখাপড়া শেষ করে প্রথমে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। তবে এখানে থেমে থাকেনি তার জীবন। চাকরি করলেও ভুলে যাননি ছোট বেলার সেই স্বপ্ন। মন থেকে দূরে সরাতে পারেননি হৃদয়ে পুষে রাখা দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। তার মনে হয়েছে সকাল ৯টা-৫টা এই গৎবাঁধা জীবনে মেধার মূল্যায়ন হবে না। গতানুগতিক চাকরি ছেড়ে তিনি গড়ে তুলেন তৈরি পোশাক ও অনলাইনে পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ‘সাফান ট্রেডস’। প্রথমে এ কাজে বাধার শিকার হয়েছেন নিজ পরিবার থেকেই। নিজের ব্যবসা করার ইচ্ছার কথা পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা সহযোগিতা করা দূরের কথা উল্টো বিরোধিতাই করেছেন। পরিবারের কাছ থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে বিরোধিতাই পান ফারজানা হাসিন।
তবে দমে যাওয়ার মতো পাত্র নন তিনি। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে এগিয়ে গেছেন। কোন বাধা তাকে পথ চলতে থামাতে পারেনি। শত বাধা উপেক্ষা করে জীবনে বয়ে এনেছেন সাফল্য। পরিবারের অন্যরা নাক ছিটকালেও মায়ের অনুপ্রেরণা তাকে সাহসী করে তুলেছে। চাকরি করার সময় থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন তিনি। বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা ভেবেই তিনি বেছে নিলেন এই খাত।
জীবনের সাফল্যের গল্প শুনাতে যেয়ে ফারজানা হাসিন বলেন, নিজে ব্যবসা শুরু করার আগে ব্যবসায়ি কয়েকজন বন্ধুর পরামর্শ নেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল পণ্যের ভোক্তা ও সরবরাহকারী। বাণিজ্য উন্নয়ন বিষয়ে চাকরির দক্ষতা তার উদ্যোগের যথার্থতা নিরূপণে কাজে দেয়।
এভাবেই তৈরি পোশাকের বিপণন নিয়ে উদ্যোগের একটি পরিকল্পনা দাঁড় করান ফারজানা হাসিন। তৈরি করেন ভোক্তা ও সরবরাহকারীদের তালিকা।
মোটামুটি একটা পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে উদ্যোগ শুরু করেন তিনি। ‘সাফান ট্রেডস’ নাম দিয়ে নিজের ব্যবসায়ি কোম্পানির নামে ফেসবুকে ফ্যান পেজ খুলেন। শুরু করেন সরবরাহকারী ও ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ। কিছু দিনের মধ্যেই কয়েকজন সরবরাহকারী ও ভোক্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। বাজারে চাহিদার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পণ্যও কেনা শুরু হয়। ২০১৪ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পণ্য বেচা-কেনা শুরু করেন তিনি। এ বছরের জুন-জুলাই নাগাদ একজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরব, ঘানা, কাতারসহ কয়েকটি দেশে সীমিত আকারে পণ্য রফতানি করে সাফান ট্রেডস। ফারজানা হাসিন বলেন, ব্যবসার শুরুতে মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি ছিল। তৈরি পোশাকের ব্যবসার জন্য এটা খুবই কম। আর্থিক সংকটের মধ্যেও ইচ্ছাশক্তির জোরে কাজ চালিয়ে গেছি।
তিনি জানান, প্রথম দিকে সাফান ট্রেডস যোগাযোগের মধ্যেমে তৈরি পোশাক কারখানার বিশেষ পণ্যগুলো সংগ্রহ করে সুবিধাজনক মূল্যে দেশ-বিদেশের ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়া হতো।
বর্তমানে সাফান ট্রেডের ছায়ায় আরও দু’টি উদ্যোগ চালানো হয়। একটি হলো ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স পেজ ‘ওয়ান শপ বিডি’ অপরটি নিজস্ব পণ্য ‘ববস গিয়ার’।
ব্যবসার প্রসারের ফলে ২০১৪ সালের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে আসেন রাজধানীর উত্তরায়। পরিবারের সদস্যরা চলে আসেন সেখানে। ব্যবসা শুরু হয় নতুন করে। এখন বেশ ভালোই চলছে ব্যবসা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ফারজানা হাসিন বলেন, তার লক্ষ্য নিজস্ব পণ্য ‘ববস গিয়ার’কে প্রতিষ্ঠিত করা। এজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ওষুধ শিল্প নিয়েও কাজ করতে চান তিনি।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজেদের সামান্য পুঁজি নিয়েই নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সাহায্যের অভাবে অনেকে বেশি দূর এগোতে পারেন না।
সরকারি বা বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আরো অনেক তরুণ-তরুণী চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন এই সফল নারী উদ্যোক্তা।
সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে ফারজানা হাসিনকে নবীন উদ্যোক্তা স্মারক দেয় ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা গ্রুপ ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’।