সাব্বিরের সেঞ্চুরির পরও হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল বাংলাদেশ

248

ডানেডিন, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরির পরও নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল সফরকারী বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে কিউইদের কাছে ৮৮ রানে হারে টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড। দলের ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতার মাঝেও ব্যাট হাতে ১০২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন সাব্বির।
ডানেডিনে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট হাতে নেমে এ ম্যাচে ভালো শুরু পায়নি নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলসের পরিবর্তে মার্টিন গাপটিলের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন কলিন মুনরো। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের পরিবর্তে প্রথমবারের মত সিরিজে খেলার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মুনরো। ৮ রান করে মাশরাফির বলে এলবিডব্লু হন তিনি।
প্রথম দু’ম্যাচে সেঞ্চুরি করা গাপটিল এবার আর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে তামিম ইকবালকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ বলে ২৯ রান করেন গাপটিল।
নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ৫৯ রানের মধ্যে ফিরে গেলেও, মিডল-অর্ডার তিন ব্যাটসম্যান দলকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যান। নিকোলস-টেইলর-এ ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লাথাম হাফ-সেঞ্চুরি করেন। নিকোলস-টেইলর তৃতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়েন। এরমধ্যে নিকোলস ৪২ ও টেইলর ৪৫ রান যোগ করেন।
হাফ-সেঞ্চুরি তুলে বড় ইনিংস খেলতে থাকা নিকোলসকে ৬৪ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। তামিমকে ক্যাচ দেয়ার আগে ৭৪ বলে ৬৪ রান করেন নিকোলস। তার ইনিংসে ৭টি চার ছিলো।
হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে বড় ইনিংস খেলার পথে ছিলেন টেইলরও। কিন্তু নিকোলসের মত বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনিও। ৮২ বলে ৭টি চারে ৬৯ রান করেন টেইলর। বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেনের বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন টেইলর। লাথামের সাথে চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রান যোগ করেন টেইলর। এই ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন তিনি।
দলীয় ২০৬ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরেন টেইলর। এরপর দলের রানের চাকা দ্রুতই ঘুড়িয়েছেন লাথাম-জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫১ বলে ৫৯ রান করেন থামেন লাথাম। তবে শেষদিকে মারমুখী মেজাজে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৭ রান করেন নিশাম। পঞ্চম উইকেটে লাথাম-নিশাম ৪১ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েছিলেন।
এরপর দলকে রানের পাহাড়ে বসিয়েছেন গ্র্যান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার। গ্র্যান্ডহোম ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ৩৭ ও স্যান্টনার ১টি ছক্কায় ৯ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ১০ ওভারে ৯৩ রানে ২ উইকেট নেন। এছাড়া অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা-রুবেল হোসেন-মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন-মেহেদি হাসান মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
জবাবে এ ম্যাচেও ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ২ দশমিক ১ ওভারে ২ রান যোগ হতেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন তামিম ইকবাল-লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ২ বল খেলে শুন্য রানে তামিম, ৪ বল খেলে ১ রানে লিটন ও ২ বল মোকাবেলা করে শুন্য হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সৌম্য। এই তিনজনকেই প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনজুরির কারনে এ ম্যাচে খেলেননি প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাফ-সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিথুন। তার পরিবর্তে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পান মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। মুশফিক ১৭ ও মাহমুদুল্লাহ ১৬ রান করে ফিরেন।
৬১ রানে মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে আবারো বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৯৪ রানে ৬ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিলো তারা। ১০০ রানের আগে ৫/৬ উইকেট হারানো ম্যাচ হারের প্রধান কারন টাইগারদের। এ অবস্থায় ধাক্কা সামলিয়ে উঠেন সাব্বির রহমান ও সাইফউদ্দিন। দেখেশুনে খেলে উইকেটে দ্রুতই সেট হয়ে যান তারা। এরপর সাবলীলভাবেই রান তোলার কাজটি করছিলেন তারা। তাই শতরানের পর দেড়শ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ। ৫৯ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন সাব্বির।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের দক্ষতা-সামর্থ্য দেখাচ্ছিলেন সাব্বির। এরমধ্যে সাইফউদ্দিনকে ৪৪ রানে থামিয়ে দিয়ে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। গাপটিলের ক্যাচে পরিণত হবার আগে ৬৩ বলে ৪৪ রান করেন সাইফউদ্দিন। ষষ্ঠ উইকেটে ১০১ রান যোগ করেছিলেন তারা। এজন্য ১১৭ বল মোকাবেলা করেন সাব্বির-সাইফউদ্দিন ।
সাইফউদ্দিনের বিদায়ের পর উইকেটে গিয়ে ২ রানের বেশি করতে পারেননি বাংলাদেশ দলপতি মাশরাফি। তবে সাব্বিরকে দারুনভাবে সঙ্গ দেন মিরাজ। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেন মিরাজ। ৭টি চারে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখাচ্ছিলেন মিরাজ। অপরপ্রান্তে রান তোলার কাজটা ভালোই করছিলেন সাব্বির। ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলটি স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাব্বির। ৫৭তম ওয়ানডেতে এসে তিন অংকে পা দিলেন সাব্বির।
সাব্বিরের সেঞ্চুরির আবহ থাকা অবস্থায় ঐ ওভারের শেষ বলে থেমে যান মিরাজ। ৩৪ বলে ৩৭ রান করেন তিনি। এরপর খুব দ্রুতই বাংলাদেশের বাকী ২ উইকেটের পতন ঘটে। ফলে ৪৭ দশমিক ২ বলে ২৪২ রানে অলআউট হয় টাইগাররা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন সাব্বির। ১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১০ বলে ১০২ রান করেন সাব্বির। নিউজিল্যান্ডের সফল বোলার ছিলেন সাউদি। ৬৫ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। ১৩৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন সাউদি। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাউদি। সিরিজ সেরা হন নিউজিল্যান্ডের গাপটিল।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে এবার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। যা শুরু হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
স্কোর কার্ড :
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল ক তামিম ব সাইফউদ্দিন ২৯
কলিন মুনরো এলবিডব্লু ব মাশরাফি ৮
হেনরি নিকোলস ক তামিম ব মিরাজ ৬৪
রস টেইলর ক মাহমুদুল্লাহ ব রুবেল ৬৯
টম লাথাম ক সৌম্য ব মুস্তাফিজুর ৫৯
জেমস নিশাম বোল্ড ব মুস্তাফিজুর ৩৭
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ৩৭
মিচেল স্যান্টনার অপরাজিত ১৬
অতিরিক্ত (লে বা-৩, নো- ২, ও-৬) ১১
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ৩৩০
উইকেট পতন : ১/২১ (মুনরো), ২/৫৯ (গাপটিল), ৩/১৫১ (নিকোলস), ৪/২০৬ (টেইলর), ৫/২৭১ (নিশাম), ৬/২৮৪ (লাথাম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মাশরাফি : ১০-১-৫১-১,
মুস্তাফিজুর : ১০-০-৯৩-২ (ও-৩, নো-১),
রুবেল : ৯-০-৬৪-১ (নো-১),
সাইফউদ্দিন : ১০-০-৪৮-১,
মিরাজ : ৯-০-৪৩-১ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ : ২-০-২৮-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক লাথাম ব সাউদি ০
লিটন দাস এলবিডব্লু ব সাউদি ১
সৌম্য সরকার বোল্ড ব সাউদি ০
মুশফিকুর রহিম ক মুনরো ব বোল্ট ১৭
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক মুনরো ব গ্র্যান্ডহোম ১৬
সাব্বির রহমান ক এন্ড ব সাউদি ১০২
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক গাপটিল ব বোল্ট ৪৪
মাশরাফি বিন মর্তুজা ক বোল্ট ব সাউদি ২
মেহেদি হাসান মিরাজ ক গাপটিল ব সাউদি ৩৭
রুবেল হোসেন রান আউট (স্যান্টনার/সাউদি) ৩
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-১৮) ১৮
মোট (অলআউট, ৪৭.২ ওভার) ২৪২
উইকেট পতন : ১/০ (তামিম), ২/১ (সৌম্য), ৩/২ (লিটন), ৪/৪০ (মুশফিকুর), ৫/৬১ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/১৬২ (সাইফউদ্দিন), ৭/১৭০ (মাশরাফি), ৮/২৩৭ (মিরাজ), ৯/২৪২ (রুবেল), ১০/২৪২ (সাব্বির)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
সাউদি : ৯.২-১-৬৫-৬ (ও-৭),
বোল্ট : ৯-১-৩৭-২ (ও-২),
গ্র্যান্ডহোম : ৫-০-১৮-১ (ও-২),
ফার্গুসন : ১০-০-৫০-০ (ও-৩),
স্যান্টনার : ১০-২-৪৬-০,
নিশাম : ৪-০-২৪-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : টিম সাউদি (নিউজিল্যান্ড)।
ম্যাচ সেরা : মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো নিউজিল্যান্ড।