একুশের গ্রন্থমেলায় বই বিক্রি জমে উঠেছে

399

ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : বই বিক্রি জমে উঠেছে অমর একুশের গ্রন্থমেলায়। প্যাভিলিয়ন থেকে শুরু করে ছোট-বড় স্টলগুলোতে আজ ক্রেতা ও বইপ্রেমি পাঠক এবং দর্শনাথীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। বিক্রিও হয়েছে বেশ।
বিভিন্ন স্টলে বিক্রেতা এবং প্রকাশকরা জানান, অমর একুশের গ্রন্থমেলায় তারা এমন জমজমাট কেনাবেচার আকাংখাই পোষন করেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে বিকেলে অভাবনীয় ভিড় ছিল। বিক্রির অবস্থাও ছিল ভাল। বিভিন্ন স্টলে বিভিন্ন বইয়ের সর্বোচ্চ বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নগুলো থেকে বিক্রেতারা বাসস’কে জানান, একাডেমির বিভিন্ন অভিধান, জাতিরজন্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং এই বইটির ইংরেজীতে অনুবাদগ্রন্থ ‘প্রিজন ডায়রি’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিদেশী লেখক মোহসেন আল আরিশি’র বই ‘শেখ হাসিনা যে রুপকথা শুধু রুপকথা নয়’ বইগুলো বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। এরপরই রয়েছে একাডেমির বিভিন্ন ‘ বাংলা একাডেমি : জেলার লোকজ সংস্কৃতি ’ সিরিজের বই।
অন্য প্রকাশ থেকে জানান হয়, হুমায়ুন আহমেদের কালজয়ী উপন্যাস ‘মধ্যাহ্ন’ এবং ‘হুমায়ুন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধ উপন্যাস সমগ্র’ বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। এই প্যাভিলিয়ন থেকে মাহমুদ কিরন বাসস’কে জানান, এ ছাড়া হুমায়ুন আহমেদের অন্যান্য উপন্যাসই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মওলা ব্রাদার্সের স্টল থেকে জানান হয়, সৈয়দ শামসুল হকের ‘ নির্বাচিত রচনাসমগ্র ’ ও ‘অনুবাদ রচনাসমগ্র’ সেলিনা হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বই দু’টি বিক্রি ভাল হচ্ছে। অন্বেষার স্টল থেকে জানান হয় ‘শহীদুল জহীরের নির্বাচিত উপন্যাসসমগ্র’ বিক্রির শীর্ষে রয়েছে।
নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘প্রান্ত প্রকাশ’এর নবীন লেখকদের ৯টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। মোড়ক উন্মোচনের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ভাষা আন্দোলন হচ্ছে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ প্রদর্শক। বায়ান্নোর শহীদদের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এগিয়েছে এবং ১৯৭১ সালে জাতিরজন্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এই মঞ্চে আজ ৫৪টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের তালিকায় থাকলেও ৩৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় বলে জানান মঞ্চের উপস্থাপক টি মণি।
আজ মেলায় এসেছিলেন সংগীত পরিচালক আজাদ রহমান। তিনি বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমি কিছুটা হতাশ হলাম যে, একমাত্র নজরুল ইন্সটিটিউটের স্টল ছাড়া আর কোন স্টলে গানের বই এবং স্বরলিপির বই পেলাম না। তিনি বলেন, মেলায় সংগীতের বই এতোটা কম, আমার জানা ছিল না। তিনি বলেন, যে মেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়, সেখানে শুদ্ধ সংগীতের বই থাকলে অবশ্যই বিক্রি হবে।
আজ মেলার উনিশতম দিবস ছিল। একাডেমির মূলমঞ্চে ‘ বাংলাদেশে ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ’শীর্ষক আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধে ছড়া সাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া বলেন, বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হচ্ছে ছড়া সাহিত্য। আর আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ছড়া হচ্ছে শাণিত শিল্পমাধ্যম। বৃটিশ আমল থেকে আমাদের ছড়াশিল্পীরা শোষনের বিরুদ্ধে ছিলেন কলমযোদ্ধা। যেটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও ব্যাপকভাবে ছড়াশিল্পীরা অব্যাহত রেখেছেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ছড়াশিল্পী সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। আলোচনায় অংশ নেন ছড়াশিল্পী আলম তালুকদার, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন ও আনজির লিটন। সন্ধ্যায় ছিল একই মঞ্চে কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।