দক্ষিণাঞ্চলের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এ বছরে পায়রা, আইসোটেক ২০২২ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে

836

বরগুনা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর দেশের সবচেয়ে বড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বাণিজ্যিক ভাবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে, এ বছরের শেষের দিকে এখানকার দুটি প্লান্টের প্রথম প্লান্টটি উৎপাদনে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পুনর্বাসন ও আবাসন প্রকল্প স¤পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৬ একর জমির ওপর নির্মিত পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানা গত ২৭ অক্টোবর’২০১৮ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন।এখন সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৫ পরিবার বসবাস করছে। পায়রা’র আগে দেশের সর্ববৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ছিল ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৯৫০ মেগাওয়াট।
অন্যদিকে, দেশের বিদ্যুৎ খাতকে পূর্ণতা দিতে বরগুনার তালতলী উপজেলাতেও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে দেশীয় সংস্থা আইসোটেক নির্মাণ করছে ৩০৭ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আইসোটেকের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী জানিয়েছেন, আইসোটেক ইলেক্ট্রিাফকেশনের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্প থেকে ২০২২ সাল নাগাদ খুব অল্প মূল্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ। ২৫ বছর এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
২০১৯ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাগরপাড়ের কলাপাড়ায় প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। পটুয়খালী জেলার কলাপাড়ার ধানখালীতে আন্দারমানিক ও রাবনাবাদ নদীর মিলনস্থলের তীরে মনোরম পরিবেশে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ চলছে এখন দ্রুতভাবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ২৪ ঘন্টার কর্মযজ্ঞে গোটা এলাকা রয়েছে মুখরিত। পায়রা তৃতীয় সমুদ্র বন্দরের নামানুসারে এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি ১০০০ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। পরিবেশ প্রতিবেশ সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে দুই প্লান্ট মিলে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এ ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হবে। প্রথমটির উৎপাদন শুরুর ছয় মাস পরে এ প্রকল্পের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার অপর বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কো¤পানি লিমিটেড এর যৌথ মালিকানায় এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৩ ভাগ। বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কো¤পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) ৫০ ভাগ করে মালিকানা রয়েছে এ কেন্দ্রে। যৌথভাবে বিসিপিসিএল এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পের অর্থায়ন করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স¤পন্ন করতে সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ২.৪৮ বিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং, প্রশাসনিক ভবন, ডরমেটরি, পুলিশ ফাড়ি, হেলিপ্যাডসহ স্থাপনার কাজ প্রায় শেষের পথে। টারবাইন সেটআপ, রটর ট্রান্সফরমা, জেনারেটরসহ আনুসঙ্গীক যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় এসে গেছে। এসব এখন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ২২০ ফুট উচ্চতার চিমনি স্থাপনের কাজ চলছে।
সেখানে ৩৮৫ মিটার দীঘ, ২৪ মিটার প্রস্থ মূল জেটির নির্মাাণ কাজ শেষ পর্যায়। জেটিতে সরাসরি মাদার ভেসেল জেটিতে ভেড়ার জন্য গোটা চ্যানেলের ২০ কিমি দীর্ঘ চ্যানেল নাব্যতা সাড়ে সাত মিটার ড্রাফট করার খনন কাজ চলছে। খননের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এছাড়া পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বৃহৎ পরিসরে খনন কাজ স¤পন্ন করলে মাদার ও লাইটার ভেসেল ভিড়তে এবং কয়লাসহ পণ্য খালাসে কোন সমস্যা হবে না।
বিসিপিসিএলএর সহকারী প্রকৌশলী মোঃ পিঞ্জুর রহমান জানান, এ জেটিতে সুপ্রাম্যাক্স, প্যানাম্যাক্স সাইজের জাহাজ খালাস করার সক্ষমতা রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কয়লাসহ পণ্য খালাশ করার সুবিধা থাকছে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯ হাজার কর্মী কাজ করছে। যার মধ্যে চীনা কর্মী আছে প্রায় দুই হাজার। পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুত উৎপাদনে কেন্দ্রটিতে কয়লার বার্ষিক চাহিদা দাঁড়াবে ৪২ লাখ থেকে ৪৬ লাখ টন। সার্বক্ষণিক মজুদ থাকবে ৪০ দিনের কয়লা। প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরের মাঝামাঝি সময় কয়লা আমদানী শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি র্গ্যাব শিপ আনলোডার জাহাজ পায়রা বন্দরে এসে গেছে।
পায়রায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। পাওয়ার গ্রিড কো¤পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)র তত্ত্বাবধানে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান জিএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এ কাজ সম্পন্ন করবে।