২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে : প্রধানমন্ত্রী

464

ঢাকা, ৩ জুন ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। কেউ এই অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না। তিনি আজ ধরলা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতু উদ্বোধনকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার আমাদের স্বপ্ন সফল হবে এবং কেউই এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে রুখতে পারবে না। আমি হয়তো আমার জীবদ্দশায় তা দেখে যেতে পাববো না, কিন্তু নতুন প্রজন্ম আমাদের এই কাজের সুফল ভোগ করবে।’
শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় তাঁর নামে নবনির্মিত এই ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেত’ুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সেতু এই এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে ভুমিকা রাখবে। এটি লালমনিরহাট ও রংপুর জেলা এবং নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।
আওয়ামী লীগ জনগণকে দেয়া ওয়াদা রাখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, এই ধরলা নদীর ওপর প্রথম সেতুটিও আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ সাল মেয়াদে সরকারে থাকার সময়ই নির্মাণ করেছিল। কিন্তুু, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সেতুটির উদ্বোধন করে যেতে না পারায় বিএনপি এর সাফল্যে দাবিদার হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধরলার প্রথম সেতু আমি উদ্বোধন করে যেতে পারিনি। তা পরবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মাস-দুয়েকের মধ্যে উদ্বোধন করে। কিন্তু তারা তখন বলে আগের সরকার কোনো উন্নয়ন করেনি। অথচ আমাদের করা সেতুই তারা উদ্বোধন করেছে। যদিও পরবর্তীতে ওই সেতু দিয়ে যাতে আমি চলাচল করতে না পারি সেজন্য পাথর ফেলে তা বন্ধ করেও রাখা হয়েছিল।’
বহুল প্রতীক্ষিত এই সেতুটি স্থানীয় জনগণের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতরের উপহার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর রক্ষণাবেক্ষণে যতœবান হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘ধরলার দ্বিতীয় সেতুটি কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটের মানুষকে আমি ঈদ উপহার হিসেবে দিয়েছি। এটি আপনারা রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।’
তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশের সুষম উন্নয়ন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তাঁর সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য, বাসস্থান এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লালমনিরহাটের প্রত্যেকটা উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। স্বাধীনতার পর পর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সচেষ্ট ছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল কিন্তু কেউ ছিটমহল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেনি। দীর্ঘদিন পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশে অনেক সরকার এসেছিল, কিন্তু কোনও সরকার ভারতের কাছে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের দাবি জানায়নি। কিন্তু আমরা সে সমস্যার সমাধান করেছি।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ, যা বিরল একটি ঘটনা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছিটমহলবাসীকে সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। গ্রামের মানুষ যেন শহরের মতো সব সুযোগ সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি। এ ছাড়া প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ যেন সমান সুযোগ সুবিধা পায় আমরা সেভাবে কাজ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুড়িগ্রামবাসী এক সময় মঙ্গা কবলিত ছিল, এখন আর তা নেই। আমরা এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মাটি নিয়ে পরীক্ষা করে কোন মাটি কোন ফসলের জন্য উপযোগী, তা নির্ণয় করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন এ অঞ্চলে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। যে জমিতে একবার ফসল হতো , সেটি দো-ফসলি হয়েছে। খাদ্য ও সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ছিল বিচ্ছিন্ন এক একটা দ্বীপ। আমরা বিভিন্ন নদীর ওপর ব্রিজ করার ফলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলো এখন এক হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে আমি গিয়েছি। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের প্রতিটি উপজেলায় গিয়েছি। সেখানকার মানুষের সমস্যার কথা শুনেছি। সরকারে আসার পর এসব মানুষের উন্নয়নে নানা উদ্যোগও নিয়েছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং তা বাস্তবায়নেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধরলা সেতুর পাড়ে প্রচুর বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সকলকে সচেষ্ট হবার আহবান জানান।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দোকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। এ সময় এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত কুড়িগ্রাম প্রান্ত থেকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা শারমিন বক্তৃতা করেন। কুড়িগ্রাম প্রান্তে সংসদ সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং উপকারভোগী বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জনগন উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থ ও প্রযুক্তিতে এই গার্ডার সেতুটির নির্মিত হয়েছে। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৮০ মিটার চওড়া সেতুটির ১৯টি স্প্যান ও ৯৫টি গার্ডার রয়েছে। এর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ২০৭ কোটি টাকা। ২০১১ সালে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তায়নই হচ্ছে এই সেতু- অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রেজেন্টেশনে এসব কথা জানান এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরকারী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা এবং সরকারের কর্মকর্তাদের কর্তব্যনিষ্ঠাই একটি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। পরপর দুইবার ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়ন করেছি। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যে উন্নয়ন করা যায় তা আমরা করে দেখিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমার কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। মা-বাবাসহ সব হারিয়েছি। আমার লক্ষ্য একটাই এ দেশের উন্নয়ন করে যাওয়া। আমার বাবা আজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, তিনি স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমি তার দেখানো পথে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি’ ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপন সহ ইন্টারনেট সেবাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দেয়ার এবং ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যও তুলে ধরেন।