বাজিস-৭ : নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস আগামীকাল

206

বাজিস-৭
নাটোর-গণহত্যা দিবস
নাটোরের ছাতনী গণহত্যা দিবস আগামীকাল
নাটোর, ৩ জুন, ২০১৮ (বাসস) : আগামীকাল ৪ জুন ছাতনী হত্যাকান্ডের ৪৭ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। একাত্তরের ৪ জুন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি রেড লেটার ডে। এ দিন ছাতনীতে ঘটে মুক্তিযুদ্ধে নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ড। সেদিন নাটোর শহর ও শহরতলীর বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং রাজশাহীর তাহেরপুরের ৩৭০ জন নিরীহ মানুষকে জবাই করে হত্যা করা হয়।কুখ্যাত রাজাকার আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় সকাল থেকে শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। আগের দিন ছাতনী, বনবেলঘড়িয়া, বড়গাছা, গোকুলপুর, পন্ডিতগ্রাম, শিবপুর, ভাটপাড়া, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর এলাকার শত শত মানুষকে ধরে এনে ছাতনী স্মৃতি ফলক সংলগ্ন বাগানে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়।
ওই এলাকার বাসিন্দা নজর মোঃ সরকার দুদু বলেন, সামনে তেবাড়িয়া হাটে যাওয়ার পথে রাজশাহীর তাহেরপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ এখানে আটক হন এবং তাদেরকেও জবাই করা হয়। জবাই করা হলেও প্রাণে বেঁচে যান সৌভাগ্যবান তিনজন। এরা হচ্ছেন লকুব উদ্দিন সরকার, হাজী কালা মুন্সী এবং আব্দুল জব্বার শাহ্। কয়েক বছর হলো জীবিত থাকা এই ৩ জন মারা গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আমজাদ হোসেন জানান, পাশের আখ ক্ষেতে নারীদের সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটে। এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার মনির উদ্দিন সরকার প্রতিবাদ করায় তাকেও জবাই করে হত্যা করা হয়। স্মৃতি স্তম্ভের মূল ফটকে ডাঃ আব্দুল হামিদ, জসিম উদ্দিন শাহ, মনোয়ার হোসেন মনু, নরেশ ঠাকুর প্রমুখসহ ৬৪ জনের নামের তালিকা থাকলেও হত্যা করা হয় ৩৭০ জনকে।
১৯৭৩ সালে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরী হত্যাকান্ডের স্থানে ছাতনী বধ্যভূমির স্মৃতি ফলক নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নতুন করে স্মৃতি ফলকের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি ফলকের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। স্থানীয় শহীদ পরিবারের সদস্যরা আগামী অর্থ বছরে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে অবশিষ্ট কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রতি বছর ৪ জুন স্মৃতি ফলক প্রাঙ্গনে স্থানীয় উদ্যোগে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এবারও কোরআন খানি শেষে বিকালে মিলাদ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও নাটোর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ছাতনীকে গণহত্যার ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে স্মৃতি স্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ বলেন, পাশেই তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি হওয়ার আক্রোশেই সম্ভবত এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল।
শহীদ আছির উদ্দিন শেখের ছেলে জয়নাল আবেদীন আত্মদানকারী ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের দাবী জানিয়ে বলেন, নিহত এবং তাদের পরিবারবর্গকে শহীদ পরিবার হিসাবে তালিকাভূক্ত করা উচিৎ। শহীদ মনির উদ্দিন সরকারের ছেলে দুলাল সরকার এই গণহত্যার বিচার দাবি করে বলেন, তবেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।
বাসস/সংবাদদাতা/মমআ/১৬১৫/মরপা