নকলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বোরো ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরি পদ্ধতি

802

শেরপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বোরো ধানের ‘কমিউনিটি বা আদর্শ বীজতলা’ তৈরি পদ্ধতি চালু করেছে। এ পদ্ধতিতে কম খরচে বেশি ফসল উৎপন্ন করা যায়। তাই শেরপুরের নকলা উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে বোরো ধানের বীজতলা তৈরির এই পদ্ধতি। চলতি বোরো মৌসুমে নকলা উপজেলার দেড় শতাধিক হেক্টর জমিতে আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ প্রযুক্তিগত সহায়তার সঙ্গে কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণও প্রদান করেছে। এতে কৃষকেরা ধান উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং অধিক ফসল উৎপন্নের আশা করছেন।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৭ হাজার ১১ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ৬ হাজার ২০৬ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩০ হেক্টর জমি রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন চাল। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য ৮১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ১৬০ হেক্টর জমিতে আদর্শ বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
নকলা উপজেলার পাইস্কা, কুর্শাবাদাগৈড়, চরকৈয়া ও ভূরদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওইসব এলাকার কৃষকেরা বোরো ধান উৎপাদনের জন্য প্রায় অর্ধশত একর জমিতে আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। ওই সময় পাইস্কা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, এবার তিনি ৪ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। এ জন্য ৩০ শতাংশ জমিতে আদর্শ বীজতলা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে প্রশিক্ষণ ও এক বস্তা বীজধান দেওয়া হয়েছে। হালিম আরও বলেন, এক একর জমিতে ধান আবাদের জন্য আদর্শ পদ্ধতিতে ৮ থেকে ১০ কেজি ধানের বীজতলা লাগে। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে একই পরিমাণ জমিতে আবাদ করতে ১০ থেকে ১২ কেজি ধানের বীজতলা লাগে। তাই আদর্শ বীজতলা পদ্ধতিতে খরচ কম হয়। আর ধান উৎপাদনও বেশি হবে বলে আশা করা যায়।
পাইস্কা গ্রামের আরেক কৃষক এনামুল হক তালুকদার বলেন, তিনি ৩ থেকে ৪ একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন। এ জন্য ২৫ শতাংশ জমিতে আদর্শ বীজতলা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলায় পানি (সেচ) দিতে সুবিধা হয়। বীজতলায় ইঁদুরের আক্রমণ কম হয়। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির চেয়ে খরচও কম হয়।
উপজেলার চরকৈয়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল, কুর্শাবাদাগৈড় গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী, ভূরদী গ্রামের কৃষক ছায়েদুল জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে তারা আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। এতে আগের বছরের তুলনায় তাদের খরচ কম হয়েছে। বীজতলার মানও বেশ ভাল হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, আদর্শ বীজতলা তৈরির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি কয়েকটি সারিতে (লাইন) ভাগ করে নেওয়া হয়। এরপর সেই সারিগুলোতে বীজধান ফেলতে হয়। এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে বীজধান, সার, সেচ ও সময়সহ খরচ অনেক কম লাগে। কোন চারা নষ্ট হয় না এবং ফলন ভালো পাওয়া যায়। এছাড়া প্রচন্ড শীতেও বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ আক্রান্ত হয় না। তিনি আরও বলেন, আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা করলে প্রতি শতাংশ জমিতে আড়াই কেজি বীজধান লাগে। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা করলে প্রতি শতাংশ জমিতে ৪ থেকে ৫ কেজি বীজধান লাগে। এতে ধানবীজও সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতিতে বীজতলার পরিচর্যার কাজও সহজে করা যায়। এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর আদর্শ পদ্ধতিতে বীজতলা করলে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উৎপন্ন চারা ক্ষেতে রোপণ করা যায়।
জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, গত ২ বছর ধরে শেরপুরে স্বল্প পরিসরে আদর্শ বীজতলা পদ্ধতিতে চারা করা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা উপকৃত হওয়ায় এ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই পুরো জেলার কৃষকেরা এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করবেন। ফলে ধান আবাদে খরচ কমবে এবং ফসল উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।