বাজিস-১১ : বাঙালি-করতোয়া-ফুলজোড় ও হুরাসাগরের নাব্যতা ফেরাতে ২৩৩৫ কোটি ব্যয়ে ড্রেজিং ও পুনঃখনন শুরু হচ্ছে

465

বাজিস-১১
বাঙালি-করতোয়া- ফুলজোড় ও হুরাসাগর
বাঙালি-করতোয়া-ফুলজোড় ও হুরাসাগরের নাব্যতা ফেরাতে ২৩৩৫ কোটি ব্যয়ে ড্রেজিং ও পুনঃখনন শুরু হচ্ছে
বগুড়া, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : চলতি বছরে উত্তরাঞ্চলের তিন জেলার মধ্যে অবস্থিত বাঙালী , করতোয়া,ফুলজোড় ও হুরাসাগর এর ২১৭ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং ,পুনঃ খনন এবং তীর সংরক্ষণ এর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সারা বছর বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া ওই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়েছে।নদী ড্রেজিং হলে বন্যার কবল থেকে ফসল যেমন রক্ষা পাবে তেমনি নদীতে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে ফসলে সেচসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে।
১০ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বলছেন, প্রকল্পের অধীনে প্রথমে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি তীর সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কংক্রিটের ব্লক (সিসি ব্লক) তৈরির কাজও এগিয়ে নেওয়া হবে। এজন্য বাঙালী , করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর নদীর পাড়ের মানুষ আনন্দিত।
পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থল থেকেই ‘বাঙালি’ নদীর উৎপত্তি। এরপর সেটি উত্তর থেকে দক্ষিণে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর উপজেলার খানপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে মিশেছে। সেখানে নদীটির নাম হয়েছে ‘করতোয়া’। এরপর ওই নদীটি সিরাজগঞ্জের নলকায় গিয়ে ‘ফুলজোড়’ নাম ধারণ করে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির দক্ষিণে হুরাসাগর নদীতে গিয়ে মিশেছে। তারপর সেই নদীর নাম হয়েছে ‘হুরাসাগর’- যেটি যমুনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থলে নদীটির গড় প্রশস্ততা ৯০ মিটার আর শেষ প্রান্তে সেই প্রশস্ততা বেড়ে হয়েছে ২০০ মিটার। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর বিভিন্ন অংশে ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত গভীর করা হবে।
মূলত নাব্য ফেরানো, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে গেল বছরের মাঝামাঝি ‘বাঙালি-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি গত ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর মধ্যে গাইবান্ধা সীমানায় ২৪ কিলোমিটার, বগুড়া সীমানায় ৯৯ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জে বাকি ৯৪ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং অথবা পুনঃ খনন করা হবে। এর পাশাপাশি ভাঙ্গণ প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত বগুড়া ৩২টি পয়েন্টে ১৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জের ২২টি পয়েন্টে আরও ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে তীর সংরক্ষণ (সিসি ব্লক ফেলে মুড়িয়ে দেওয়া) করা হবে।
সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায় হলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাবে, ভাঙন রোধ হবে, ধান চাষের জন্য সেচ কাজ সহজ হবে। । মৎস্য আরোহণকারীদের জীবিকা বৃদ্ধি পাবে। বন্যায় ধান আর নষ্ট হবে না।’ এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে।
পাউবো বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, প্রকল্পের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন টে-ারের মাধ্যমে শুধু কাজটা শুরু করা বাকি। ধারণা করা হচ্ছে এপ্রিলের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের অন্তত ৫টি নদীর পানি বাঙালি, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর ধারণ করতে পারবে। এর ফলে একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে তেমনি শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি ধরে রাখাও সম্ভব হবে। ফলে মাছের উৎপাদন বাড়বে যার ফলে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করাও সহজ হবে।’
বাসস/সংবাদদাতা/২০০০/মরপা