নাটোরে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সমাজ সেবা বিভাগ

802

নাটোর, ৯ মার্চ, ২০১৮ (বাসস) : জেলার বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সমাজ সেবা বিভাগ। শিক্ষা সহায়তা, বয়স্ক ভাতা এবং প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া যাযাবর এ সম্প্রদায়কে সমাজের মূল ¯্রােতধারায় নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখছে সমাজ সেবা বিভাগ।
সমাজ সেবা অধিদপ্তর, নাটোর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে পরিচালিত জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী ৩৯৫ জন বেদে এবং ১০ হাজার ৩৫৯ জন অন্যান্য অনগ্রসরসহ মোট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ হাজার ৭৫৪ জন। যাযাবর জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। বেদে জনগোষ্ঠী সাপুড়িয়া, বাজিকর, মালবেদে, সান্দার, টোলা, মিরশিকারী, বরিয়াল সান্দা ও গাইন বেদে- এ আটটি গোত্রে বিভক্ত। এদের প্রধান পেশা ক্ষুদ্র ব্যবসায়, তাবিজ-কবজ বিক্রি, সর্প দংশনের চিকিৎসা, সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখানো, সাপ বিক্রি, আধ্যাতিœক স্বাস্থ্য সেবা, শিংগা লাগানো, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, কবিরাজি, বানর খেলা, যাদু দেখানো ইত্যাদি। অন্যদিকে জেলে, সন্নাসী, ঋষি, বেহারা, নাপিত, ধোপা, হাজাম, নিকারী, পাটনী, কাওড়া, তেলী, পাটিকর, বাঁশফোর, ডোমার, রাউত, তেলেগু, হেলা, হাড়ি, লালবেগী, বাল্মিগী, ডোম জনগোষ্ঠী অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত। এ শ্রেণীর মানুষেরা পয়ঃনিষ্কাশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ কতিপয় অপরিহার্য সেবাধর্মী পেশার সাথে জড়িত থেকে নাগরিক জীবনকে সুন্দর রাখছে।
বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দরিদ্র, অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু করা হয়। নাটোর জেলায় প্রাথমিক স্তরে মাসিক ৩০০ টাকা হারে ৯৯ জন, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা হারে ৫৪ জন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা হারে ১৬ জন এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার টাকা হারে ১১ জনসহ মোট ১৮০ জন এ শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন।
বয়স্ক/ বিশেষ ভাতা কর্মসূচির আওতায় বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ৫০ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের অক্ষম ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। নাটোর সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ১২ জন করে, বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলায় ১৮ জন করে, বাগাতিপাড়া, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ৩০ জন করে, নাটোর পৌরসভা এলাকায় ২৪ জনসহ নাটোর জেলায় মোট ১৭৪ জন মাসিক ৫০০ টাকা হারে বয়স্ক/ বিশেষ ভাতা পাচ্ছেন।
বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে সমাজের মূল¯্রােতধারায় নিয়ে আসার জন্যে চালু করা হয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। এ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য ও পশুপালন ট্রেডে ৩২ জন এবং সেলাই ট্রেডে ১৮ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে এককালীন দশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বাসসকে বলেন, আবহমানকাল থেকে এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তারা বৈষম্যের শিকার অথচ সমাজের কতিপয় অপরিহার্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত। ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে “সামাজিক নিরাপত্তা” কর্মসূচীর আওতায় বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্যে শিক্ষা সহায়তা, বয়স্ক/ বিশেষ ভাতা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।